অাকাশ নিউজ ডেস্ক:
কেন্দ্র থেকে এখন আর কোনও প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে না। স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে স্থানীয় সরকারের চাহিদাকে। প্রকল্প তৈরির পর পাঠাতে হবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এবং চট্টগ্রামের এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্দেশনায় বলেন, ‘স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করে পাঠাতে হবে।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা তাদের নির্বাচনি এলাকায় অনেক প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিচ্ছেন। এসব প্রকল্প একনেকেও অনুমোদন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এসব প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এসব প্রকল্পের কোনও সুফল জনগণ পাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গেছে—যেকোনও এক রাস্তার মাঝখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ এর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় সেতুটি জনসাধারণের কোনও কাজে আসছে না। বছরের পর বছর ওই সেতুটি সংযোগ সড়কবিহীন অবস্থায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি বরাদ্দের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয় না।
পরিকল্পনা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেতুর প্রয়োজনই নেই যে এলাকায়, সেই এলাকার স্থানীয় এমপি বা মন্ত্রীরা ব্যক্তিগত আগ্রহে এ ধরনের প্রকল্পে অনুমোদন নিচ্ছেন। এসব প্রকল্প সম্পর্কে ওই এমপি বা মন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষও কিছু জানেন না।
এছাড়া কোনও এলাকায় একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রাস্তার মাঝখানে একটি খালের ওপর সেতু নির্মাণের কোনও প্রকল্প নেই। এতে নির্মিত রাস্তাটি ব্যবহার হচ্ছে না। কোনও এলাকায় সেতু থাকলেও তার ১০০ গজ দূরেই হয়তো আরেকটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বড় কোনও নেতার আগ্রহে এসব প্রকল্প তৈরি করা হয়। কখনও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয়তো এমপি বা স্থানীয় অন্য কোনও নেতার।
পরিকল্পনা বিভাগের এসব কর্মকর্তা মনে করেন, আর্থিক সুবিধা পেতেই স্থানীয় সংসদ সদস্য বা নেতারা নিজেদের ইচ্ছেমতো এ ধরনের প্রকল্প তৈরি করছেন। আশ্চর্যের বিষয়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদ কর্মকর্তারাও এসব প্রকল্পের বিষয়ে জানেন না।এ ধরনের জটিলতা এড়াতেই এ ধরনের প্রকল্প তৈরির সময় স্থানীয় চাহিদার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা সম্বলিত প্রকল্প না হলে সেসব প্রকল্প একনেকে উত্থাপন না করারও সিদ্ধান্তও নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক একনেক সভায় বলেছেন, ‘স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে তৈরি না হলে কোনও প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হবে না। কমিশন দেওয়া নেওয়ার উদ্দেশ্যে কোনও প্রকল্প নয়। একইসঙ্গে প্রকল্প অনুমোদন হবে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না বা জনগণের কল্যাণে আসবে না। এমন ঘটনা সহ্য করা হবে না।’ জনসাধারণের প্রয়োজনে আসবে এমন প্রকল্প কেউ পাঠালে তা একনেকে অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব আমার বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ কাকে দেবো, কাকে দেবো না; কে কাজ পেলো আর কে কাজ পেলো না; কাজের বিপরীতে কমিশন কে কতো পেলো, আর কে পেলো না…এ সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতি আমার সময়ে চলবে না।’
প্রধানমন্ত্রী ওই সময় আরও বলেন, ‘অনেক কাজ আছে যা স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশনের করার কথা। কিন্তু প্রকল্প তৈরি হচ্ছে না। সে কারণে ২০১৫ সালে আমি বলে যাওয়ার পরেও ২০১৭ সালে ওই প্রকল্প তৈরি হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ. হ. ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘জটিলতা এড়াতেই স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি, অনুমোদন এবং প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি না হলে, অনেক প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় হওয়া সত্বেও তা অনুমোদন হচ্ছে। পরে তা জনসাধারণের কাজে আসেনি।