লকডাউন শিথিলতায় দীর্ঘ সংকট যেভাবে আলিঙ্গন করছে বাংলাদেশ

0
235

আকাশ জাতীয় ডেস্ক:

করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন একটা ফর্মুলা দিয়েছে। এই ফর্মুলা অনুসরণ করছে ইউরোপের দেশগুলো। এই ফর্মুলা অনুযায়ী করোনা মোকাবেলা একটি তিন মাসের প্যাকেজ। করোনা সংক্রমণ হওয়ার পরই প্রথম যে কাজটি করতে হবে, যারা সংক্রমিত তাদেরকে আলাদা করতে হবে এবং সংক্রমিত ব্যক্তিদের যারা সংস্পর্শে এসেছে তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে। যে এলাকাগুলোতে সংক্রমিত হয়েছে সেই এলাকাগুলোকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।

দ্রুত বেশি করে পরীক্ষা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সবকিছু বন্ধ করে দিতে হবে। এ রকমভাবে তিন সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহের কার্যকাল চলার পর পরিস্থিতি আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। তখন আরও চার সপ্তাহ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং সব কিছু বন্ধ রাখার ব্যাপারটি অব্যাহত রাখতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে করোনা পরিস্থিতি কমতে শুরু করবে। তখন স্বাস্থ্যবিধিগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। বের হবার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বের হবার জন্য মানুষকে স্বাস্থ্যবিধিগুলো আবার জানিয়ে দিতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে যে জায়গাগুলো কম স্পর্শকাতর সে জায়গাগুলো খুলে স্বাভাবিক জীবনে ধীরে ধীরে ফিরতে হবে। এই ফর্মুলাটি উহানে অনুসরণ করা হয়েছে, চীনে অনুসরণ করা হয়েছে। এখন ফ্র্যান্স, ইতালিসহ ইউরপের দেশগুলো এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একাধিক গবেষণা বলছে, যদি এই পদ্ধতি অনুসরণ না করা হয়, তাহলে আমরা দীর্ঘমেয়াদি করোনা সংক্রমনের সংকটে পরবো। কারণ একটি গ্রুপ যখন সংক্রমিত হয়ে সামাজিক সংক্রমন ছড়িয়ে দেবে, তখন যদি লকডাউন না হয়, অবাধে মেলামেশা হয়; তাহলে আরেকটি নতুন জনগোষ্ঠী করোনায় আক্রান্ত হবে।

তখন তারা আবার আরেকটি অংশকে করোনা ছড়িয়ে দেবে। এভাবে হার্ড ইমিউনিটির দিকে একটি দেশ যাবে। যার ফলে তিন মাস তো দূরের কথা, ছয় মাসেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। প্রতিটি ধাপে নতুন জনগোষ্ঠী সংক্রমিত হতে থাকবে এবং সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এ জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, লকডাউন হলো করোনা মোকাবেলার সবচেয়ে বড় মহৌষধ। কিন্তু বাংলাদেশ যেন উল্টো পথে হাঁটছে। আমরা ২৬ মার্চ থেকে যে লকডাউন দিয়েছিলাম, তা এখন নেই বললেই চলে। রাস্তাঘাটে এখন তীব্র যানজট।

এখন করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের লাগামের বাইরে চলে যাচ্ছে। আজ সর্বোচ্চ ১১শ’ ৬২ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী মারাও গেছে, যা হচ্ছে ১৯ জন। এ সময় সব কিছু খুলে রাখার ফলে আমরা দীর্ঘ মেয়াদী একাধিক সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আসুন দেখে নেওয়া যাক আমরা কী কী ধরনের সংকটে যাবো:-

১. জনস্বাস্থ্যের সংকট

করোনা দীর্ঘ মেয়াদী হওয়া মানে রোগীর সংখ্যা বাড়া, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়া। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়া মানেই হলো হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকট হওয়া। ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়া এবং চিকিৎসাহীনতার যুগে প্রবেশ করা।

২. অর্থনৈতিক সংকট

দীর্ঘদিন সংকট থাকলে আমাদের লকডাউন দীর্ঘ করতে হবে, স্বাভাবিক কর্মজীবনে মানুষ ফিরতে পারবে না। অফিস আদালতের কাজ হবে না। ফলে আমাদের অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়তে থাকবে। আমরা একটা দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক সংকটের দিকে চলে যাব।

৩. বেকারত্ব

দীর্ঘমেয়াদী সংকট হলে বেকারত্ব বাড়বে। ইতিমধ্যেই বেকারত্ব শুরু হয়ে গেছে। এই ছুটি লকডাউন যত বাড়বে তত আমাদের বেকারত্ব বাড়তে থাকবে। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়লে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আর একটু খাঁদের মধ্যে ডুবে যাবে।

৪. আমদানি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব

দীর্ঘ সময় এই সংকট থাকলে বিদেশের সাথে যোগাযোগ আরও দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। ফলে আমাদের আমদানি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যে পোশাক কারখানার মালিকরা আশা করে তাদের বিদেশি বায়ারদের খুশি করবার জন্য গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে দিয়েছিলেন, তারা সবচাইতে বড় বিপদে পরবেন, যখন বাংলাদেশে করোনার কারণে ইউরোপ এবং আমেরিকার বায়াররা তাদের পোশাকগুলো নিতে অস্বীকৃতি জানাবে। বাংলাদেশের এই বিচ্ছিনতা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে একটা দীর্ঘমেয়াদি সংকটের দিকে।

৫. অভিবাসনে ধস

করোনা দীর্ঘায়িত হলে আমাদের অভিবাসনে ধস নামবে। ইতিমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে। গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে গত মাসে। এই অবস্থায় সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলে আমাদের অভিবাসীরা বিদেশে যেতে পারবে না, কাজ করতে পারবে না।

দেখা যাবে যে, সারা বিশ্ব ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু আমরা তখনো করোনাতে ভুগছি। তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী হবে? আমাদের কোন সংকটেরই শর্টকাট সমাধান নেই। আমাদের সব সংকটের সমাধান নিতে হবে আমাদের ভালোর কথা বিবেচনা করে এবং একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমরা বোধ হয় একটা শর্টকাট সমাধানের পথ খুজেছিলাম আর সে কারণেই আমাদের হয়তো দীর্ঘমেয়াদি সংকটকে আলিঙ্গন করতে হতে পারে ।