মাদকাসক্তদের নির্যাতনের ২৪ দিন পর মৃত্যু

0
93

অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:

মাদকাসক্তদের নির্যাতনের ২৪ দিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বাঘহাটা গ্রামের শিখন মিয়ার (২৮)। বুধবার সকালে হাসপাতাল থেকে শিখনের লাশ বাড়িতে আনা হয়। নিহত শিখন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের বাঘহাটা গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে।

পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, পার্শ্ববর্তী চাতাল গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের চাঁন মিয়ার ছেলে রোকন ও তার সহপাঠীরা প্রায়ই শিখনদের ঘরবাড়ির সামনে বসে মাদকসেবন করত। ২২ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে মাদকসেবন করতে এলে শিখন মিয়া মাদকসেবীদের বাধা দেয়। এ ঘটনায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ি থেকে ধারালো অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শিখন মিয়ার ঘর কুপিয়ে তছনছ করে এবং শিখন মিয়াকে ধরে হাত-পা বেঁধে বাড়ির সামনে ফেলে লোহার রড, ছুরি, বল্লম, বর্শা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসা নেয়ার পর অবস্থার অবণতি ঘটলে সেখান থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে শিখনের মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে হাসপাতাল থেকে শিখনের লাশ বাড়িতে আনা হয়।

নিহতের পরিবার জানায়, ঘটনার পরপরই কটিয়াদী মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ১১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়। আদালত এ ঘটনায় মেডিকেল সার্টিফিকেট তলব করেন। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে পৌঁছার আগেই হাসপাতাল থেকে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন দরিদ্র কৃষিশ্রমিক শিখন মিয়া।

গ্রামের বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম ভুইয়া (৮৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শিখন ও তার স্বজনদের আর্তচিৎকার শুনে আমার মতো গ্রামের শত শত মানুষ ছুটে এসেছে। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে হাত-পা বেঁধে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হলেও আমরা কিছু করতে পারিনি। কারণ, এ মাদকাসক্ত সশস্ত্র যুবক দল আগে থেকেই ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে আমাদের সতর্ক করে দেয়।

আড়াই মাসের শিশুপুত্র কোলে নিয়ে বিলাপরত নিহত শিখনের স্ত্রী সাদিরা বেগম বলেন, পাষণ্ডরা শত শত মানুষের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়া খুঁচাইয়া খুঁচাইয়া আমার স্বামীরে মারছে, আমার বুকের মানিককে এতিম বানাইছে। আমি তার ফাঁসি চাই।

কটিয়াদী থানার ওসি (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও মৃত্যুর খবর পেয়ে আমাদের পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খোঁজখবর নিয়েছেন বলে তিনি জানান।