অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ এবং পাসপোর্ট জব্দ ও বিদেশে যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
মামলার বাদী দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে—দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এটি আসার পরপরই বেশ কয়েকজন আসামি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। আসামিরা বিদেশে গেলে আর ফিরে আসবেন না। পাসপোর্ট জব্দ করে কেউ যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন তিনি।
দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিরা হলেন সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু (বর্তমানে কমিটি স্থগিত), সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামশেদুল আলম চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা রাশেদুল আলম, আবু তোরাব, মিজানুর রহমান, মো. আরমান, আরিফুল হক, আবদুল মালেক ও মনসুর আলম।
মামলাটি পরিচালনা করা দিয়াজের বড় বোন আইনজীবী জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী বলেন, আদালত আসামিদের গ্রেপ্তার এবং দেশত্যাগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, আদেশে বিচারক উল্লেখ করেছেন যে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে যেকোনো আসামিকে গ্রেপ্তার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা সম্পূর্ণ স্বাধীন। আসামিরা দেশ ছেড়ে যাতে পালাতে না পারেন, সে জন্য তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
তবে আদালতের আদেশটি এখনো হাতে পাননি বলে আজ রাত আটটার দিকে বলেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হুমায়ুন কবির সরকার। তিনি বলেন, এটি হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন বাসায় দিয়াজ ছাড়া পরিবারের আর কেউ ছিলেন না। লাশ উদ্ধারের ২২ দিন আগে গত বছরের ১৯ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দিয়াজসহ ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালান প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাওয়ার আগে দিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের একটি পক্ষ শুরুতে দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রচার করে। তবে অপর পক্ষ অভিযোগ করে, ৯৫ কোটি টাকার নির্মাণকাজের দরপত্রের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা দিয়াজকে হত্যা করে বাসায় লাশ ঝুলিয়ে রাখেন। দিয়াজের লাশ উদ্ধারের পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে—এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি। তখন ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।
ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ এনে গত বছরের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। পরে ৬ ডিসেম্বর লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। প্রতিবেদনটি ১ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তার হাতে এসে পৌঁছায়। এতে বলা হয়, দিয়াজকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।