অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীদের সাহায্য করা ২৬৫ জন রাজাকার, আলবদর এবং শান্তি কমিটির সদস্যের তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলনের তথ্য অনুসন্ধান কমিটি। এ সংক্রান্ত ‘যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের অপরাধের তথ্য-উপাত্তের প্রাথমিক রিপোর্ট’ আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হবে। সংগঠনের সদস্য সচিব ওসমান আলী এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছে, সে রকম ২০০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে এই ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন’। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে এই তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করা হয়।
এতে ৬৮ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের নীলনকশা প্রণয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক সব যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে সরাসরি গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে ১১৮ জনের বিরুদ্ধে। ১৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে গণহত্যায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ করা হয়।
ওই তালিকায় একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, পাঁচজন মেজর জেনারেল, পাঁচজন কর্নেল, ২০ জন ব্রিগেডিয়ার, ৩৯ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, ৪৫ জন ক্যাপ্টেন, ৮১ জন মেজর, দুজন লেফটেন্যান্ট, তিনজন বিমানবাহিনীর ও তিনজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ছিল।
২০১৫ সালে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ঘোষণা দিয়েছিলেন, ওইসব সেনা কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনা হবে এবং এদেশে তাদের সহযোগীদেরও বিচার করা হবে। শুরু থেকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনাসদস্যের বিচারের কথা বলা হলেও পরের বছর পাঁচজন বাড়িয়ে ২০০ জনের তালিকাটি প্রকাশ করা হয়।
সংগঠনের সদস্য সচিব ওসমান আলী আরো বলেন, ওই তালিকা প্রকাশের পর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এই কমিটি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এবং যাচাই-বাছাই করে ভবিষ্যতে আরো তালিকা প্রকাশ করবে। তার ধারাবাহিকতায় মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রমকে প্রধান করে একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল, প্রমাণাদি পর্যবেক্ষণ করে ২৬৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তৈরি করেছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, পাকিস্তানি বাহিনীদের সহায়তা করাসহ বিভিন্ন রকম রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
তিনি জানান, সংগঠনের আহ্বায়ক ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এই তালিকা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এই তালিকা সবার সামনে তুলে ধরবেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) তিন তলায় স্বাধীনতা হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ওসমান আলী জানান, একাত্তরে বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড কার্যকরের মধ্যে সংগঠনটি গড়ে উঠে। এই সংগঠনের আহ্বায়ক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় চুক্তির আওতায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ১৯৫ সেনা সদস্যকে নিজ দেশে বিচারের মুখোমুখি করার শর্তে ফেরত নেয় পাকিস্তান। এরপর এত বছর পার হলেও তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি দেশটি। গত বছরের ২৬ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ওই ১৯৫ জন পাকিস্তানি ঘাতকের ‘প্রতীকী বিচার’ করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ‘গণআদালত’ গঠন করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতগুরু গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার শুরু করেছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। বর্তমান সরকার এর আগের মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এর মাধ্যমে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের তিন বছরে ৬ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়।
এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেন শাজাহান খান। তিনি তখন আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছিলেন, ‘প্রতীকী বিচারের মাধ্যমেই আমাদের এই আন্দোলন শুরু হবে। যতদিন পর্যন্ত তাদের নির্মূল করতে না পারব, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, পাকিস্তানি নরঘাতক সেনাবাহিনীর ৯৫ হাজার সদস্য ও তাদের সহযোগী আল-বদর, আল-শামস, রাজাকাররা বিশ্বের ইতিহাসে নৃশংসতম বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল। তারা লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল। মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধে তাদের এই বিচার করা হবে। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের কার্যক্রম চলছে, আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।