অাকাশ ইতিহাস ডেস্ক:
আজ বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সাল
ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ।
তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে দৈনিক আকাশের পাঠকদের জন্য নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, বুধবার। ৯ই ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। একনজরে দেখে নিন ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
মহান ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২১ ফেব্রুয়ারি । একটি ঘটনাভিত্তিক জাতীয় দিবস। এখন আর তা জাতীয় দিবসে নেই। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এর সাথে বাঙালি জাতির গৌরব ও বেদনা জড়িত। মাতৃভাষার মর্যাদা আদায়ের জন্য কয়েক তরুনকে জীবন দিতে হয়েছিল বলে এই দিনটি বেদনার রক্তে রঙিন। আবার ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের পথে বাঙালি তার স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ লাভে সক্ষম হয়েছে বলে এই দিনটি জাতীয় জীবনে বিশেষ গৌরবেরও। মোট কথা, একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার ন্যায্য অধিকার আদায়ের কঠিন লড়াইয়ের ইতিহাস । ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসন শেষ হয়। পাকিস্তান নামে গঠিত হয় নতুন রাষ্ট্র। কিন্তু এতে বাঙালিদের কোনো সুবিধা হয় না। পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাহ্যিক স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কাজকর্মে নয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে বর্বর হত্যাকা- সাধিত হয়েছিলো, তা স্মরণ করার জন্য প্রতি বছর ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহীদ দিবস উদযাপন করা হয়। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি কেবল শহীদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বাঙালির জীবনের সবখানে তা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনাই বাঙালিকে স্বাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। এরই মাধ্যমে বাঙালি আত্মসচেতন হয়ে ওঠে । তারা নিজেদের অধিকার আদায় করার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত হয়। একুশের প্রেরণা থেকেই ১৯৬৯ সালে দেশব্যাপী আন্দোলন হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাঙালির সংগ্রামী চেতনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। মাতৃভাষার মর্যাদা আদায় করতে গিয়ে বাঙালিদের মধ্যে একতা আসে। শোষণ থেকে মুক্ত হবার কথা তারা ভাবতে শেখে। বাঙালির জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই জাতীয়তাবোধ বিশেষভাবে কার্যকর হয়েছিলো। তাই বলা চলে, একুশে ফেব্রুয়ারি সংগ্রামের পথ ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর একুশে ফেব্রুয়ারি আরো অধিক মর্যাদার সাথে উদযাপিত হয়ে আসছে। ভাষা-শহীদের মর্যাদা আরো বেশি করে দেয়া হচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সরকারি অফিস-আদালতে বাংলা ভাষার মাধ্যমে সকল কাজকর্ম চলছে। বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালু হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিই শুধু নয়, সমগ্র ফেব্রুয়ারি মাসকে এখন উৎসবের মাস হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমী বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করছে। গোটা ফেব্রুয়ারি মাস ধরে বাংলা একাডেমীতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ মেলা এখন একটি জাতীয় মেলায় পরিণত হয়েছে। বহু পূর্ব থেকে এ মেলার প্রস্তুতি চলে। ১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই শুরু হয় বইমেলা। অসংখ্য বইয়ের দোকান বসে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে । এ মেলা চলে ফেব্রুয়ারির শেষ অবধি ।
১৯১৬ সালের এ দিনে প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মান ও ফরাসী সেনাদের মধ্যে ভার্দুনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। জার্মানী ফ্রান্সের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ভার্দুন দখলের জন্য যুদ্ধ শুরু করে। কিন্তু দশমাস ধরে তীব্র সংঘর্ষের পর জার্মান সেনারা পরাজিত হয় এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও জার্মানীর পরাজয়ে ভার্দুনের ঐ যুদ্ধের প্রভাব ছিল। এ যুদ্ধে জার্মানী ও ফ্রান্সের প্রায় দশ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
খৃষ্টীয় ১৯১৮ সাল বা ফার্সী ১২৯৬ সালের এ দিনে ইরানের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মীর্জা সাদেক হাকিম ইন্তেকাল করেন। কয়েকটি ইউরোপীয় ভাষায় দক্ষ সাদেক হাকিমের অধিকাংশ কবিতা তার সংগ্রামী সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিচ্ছবি। ইরানের সাংবিধানিক আন্দোলনের যুগে সাদেক হাকিমের পরিচালিত পত্রিকা আদাব জনগণকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল। সাদেক হাকিম সাংবিধানিক আন্দোলনের সময়কার বিপ্লবী সরকারের সংস্কৃতি ও বিচার মন্ত্রী হিসেবেও কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯২০ এ দিনে বৃটেনের ষড়যন্ত্র ও হস্তক্ষেপকামী নীতির অব্যাহত ধারায় রেজা খান নামের একজন নিচু পর্যায়ের সেনার নেতৃত্বে ইরানে সেনা-অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। তেহরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অভ্যুত্থানকারীরা অনেকটা বিনা যুদ্ধে তেহরান দখল করে। তারা কাজার বংশের শেষ বাদশাহ শাহ কাজারকে ভয় দেখিয়ে রেজা খানকে সেনাপ্রধান হিসেবে ও তার সহযোগি সাইয়েদ জিয়াউদ্দিন তাবাতাবাইকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য করে। ইংরেজরা নতুন সেনা প্রধান রেজা খানকে দিয়ে স্বাধীনতাকামী আন্দোলনগুলো দমন করে এবং ইরানের মূল ক্ষমতা তার ওপরই ন্যস্ত করে। অভ্যুত্থানের চার বছর পর রেজা খান ইরানের নতুন বাদশাহ বা রাজা হন। রেজা খান ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ইরানে বৃটেনের স্বার্থ রক্ষা করেন। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় রেজা খান জার্মানীর দিকে ঝুঁকে পড়ায় ইংরেজরা রেজা খানকে পদচ্যুত ও নির্বাসিত করে এবং তার ছেলে রেজা পাহলাভীকে ক্ষমতায় বসায়।
১৯৫৮ সালের এ দিনে মিশর ও সিরিয়ার জনগণ এক গণভোটে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রজোট হিসেবে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র গঠনের পক্ষে রায় দেন। ফলে এ দুটি আরব দেশ এক রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং জনগণের রায়ে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসের এই একীভূত রাষ্ট্রের প্রধান হন। কিছুকাল পর ইয়েমেনও এ রাষ্ট্রে যোগ দেয়। আরব ঐক্যের জন্য ও বিশেষ করে দখলদার ইসরাইলকে মোকাবেলার জন্য এ ঐক্যবদ্ধ আরব প্রজাতন্ত্র গঠন করা হয়। এ প্রজাতন্ত্রে একইসাথে কয়েকটি সরকারের অস্তিত্ব বজায় ছিল, শুধু নীতিগত বিষয় বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হত একটি উচ্চতর বিশেষ পরিষদের মাধ্যমে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ আরব প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্ব তিন বছরের বেশী স্থায়ী হয় নি। এ ঐক্যবদ্ধ প্রজাতন্ত্রের ওপর মিশরের কর্তৃত্ব থাকায় সিরিয়া এ রাষ্ট্রজোট ত্যাগ করে এবং ১৯৬১ সালে তা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়।
১৯৬৫ সালের এ দিনে মার্কিন সংগ্রামী ও কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান নেতা ম্যালকম এক্স একটি সন্দেহভাজন গোষ্ঠীর হামলায় শাহাদত বরণ করেন। তিনি ১৯২৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং যৌবনে একটি কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম গ্রুপের সংস্পর্শে এসে মুসলমান হন। এই কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন মুসলমান নেতা পরে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের এক ব্যাপক-বিস্তৃত ও শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন। ম্যালকম এক্সের বিপ্লবী চিন্তাধারা মার্কিন বর্ণবাদীদের ক্ষুব্ধ করে এবং তারা এই মহান নেতাকে এক জনসমাবেশে বক্তৃতারত অবস্থায় শহীদ করে। ম্যালকম মনে করতেন বর্ণবাদী মার্কিন সরকারের যাতাকলে পিষ্ট কৃষ্ণাঙ্গরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে স্বাধীনতা, মুক্তি, ন্যায়বিচার ও সাম্যসহ তাদের হারানো অধিকারগুলো ফিরে পেতে পারে।
১৯৮৩ সালের এ দিনে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময় ইরানী মুজাহিদরা দক্ষিণ পশ্চিম ইরান থেকে খায়বার শীর্ষক অভিযান শুরু করে। ইরানী মুজাহিদরা জলাভূমি ডিঙ্গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব ইরাকের বসরার কাছে তেলসমৃদ্ধ মজনুন দ্বীপটি দখল করে। এ যুদ্ধে ইরানী মুজাহিদদের অপূর্ব রণকৌশল ও সাফল্যে সারা বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি হয়।
১৯৫২ সালের এ দিনে বাংলাদেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে আহূত জনতার মিছিলে পুলিশের গুলি বর্ষণে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক ও জাব্বারসহ আরো কয়েকজন। এ দিবস এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
- মস্কোর যাজকের পুত্র মিখাইল রোমানভ রাশিয়ার জার নির্বাচিত (১৬১৩)
- নেদারল্যান্ডসোর ব্রিটেনের কাছে সিলন (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) হস্তান্তর (১৭৯৫)
- কিউবা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা (১৯০১)
- জার্মান গোলন্দাজ বাহিনীর বোমা হামলার মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের ভার্দুন যুদ্ধ শুরু (ভয়াবহ দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধে নিহত হয় ১০ লক্ষাধিক লোক) (১৯১৬)
- জার্মানির মিউনিখে বেভারিয়ান প্রধানমন্ত্রীর কূট রিজানার আততায়ীর হাতে নিহত (১৯১৯)
- ব্রিগেডিয়ার রেজা খান কর্তৃক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরান সরকার উৎখাত। পরে রেজা খানের রেজা শাহ উপাধি ধারণ (১৯২১)
- ব্রিটেনে পরিচয়পত্র বিলুপ্ত (১৯৫২)