ঢাকা ০৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবশেষে ডায়াবেটিস চিকিৎসার মেশিন উদ্ভাবন

অাকাশ আইসিটি ডেস্ক:

অন্ধ মানুষদের পথচলার সহায়তায় বিশেষ ধরনের যন্ত্র (ব্লাইন্ড-আই) উদ্ভাবন করেছিলেন সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু মিয়া। এবার তিনি ‘ভ্যাকুয়াম অ্যাসিস্টেড ক্লোজার থেরাপ’ বা ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবন করলেন ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। এ মেশিন দিয়ে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ ও ‘বেড সোর’ রোগীদের গভীর-অগভীর সব ধরনের ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করা সম্ভব।

ভ্যাকুয়াম মেশিন তৈরিতে তাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিক ফুট চিকিৎসক ডা. মঞ্জুর আহমদ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও ডা. মঞ্জুর আহমদের ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়া রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং ছিল রাজু মিয়ার জন্য। তবুও একটানা ২ মাস নিজের বাসা আর ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২ এ কাজ করে উদ্ভাবন করেন ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। আর এ কাজে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে রোগীদের মাঝে সেবাও প্রদান করা হচ্ছে।

উদ্ভাবক রাজু মিয়া বলেন, “দেশি-বিদেশি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। এ যন্ত্রটি তৈরি করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। রাত-দিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। যন্ত্রটি একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের সাহায্যে চলে। সেই সফটওয়্যার তৈরি করতেই লেগেছে বেশ কিছুটা সময়। পরে কন্ট্রোলার সার্কিট বোর্ড তৈরি করি। এ বোর্ড পুরো ভ্যাকুয়াম মেশিনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ যন্ত্রের মেকানিক্যাল কাজটাও জটিল ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি।”

ক্ষতস্থান ভালো করে তোলার চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’। ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’ কীভাবে কাজ করে? এ ব্যাপারে ডা. মঞ্জুর আহমদ জানালেন, ভ্যাকুয়াম থেরাপি একটি বাস্তবধর্মী ক্ষত চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ক্ষত বা অপারেশন সাইট থেকে রক্ত বা তরল শোষণ করা হয়। বিশেষ ধরনের একটি ফোম ক্ষতস্থানে লাগানো হয়। এরপর বিশেষ ধরনের পাতলা ফিল্ম দিয়ে ক্ষতস্থান সম্পূর্ণ ঢেকে (সিল) দেয়া হয়। সিলের ভেতর থেকে একটি পাইপ ভ্যাকুয়াম মেশিনের পাম্পে সংযুক্ত করা হয়। পাম্পের সাহায্যে ক্ষতস্থানের তরল পদার্থ ও সংক্রামক উপাদানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে টেনে নেয়া হয়। তিনি জানান, ভ্যাকুয়াম মেশিন তৈরি করার পর বেশ ক’জন ডায়াবেটিক ফুট ও বেড সোর রোগীর চিকিৎসায় এটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়। সে পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছে রাজুর তৈরি ভ্যাকুয়াম মেশিন। এ সফলতার পর বর্তমানে সিলেটে ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টারে এর মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আপাতত এ যন্ত্র নিয়ে বাণিজ্যিক কোনো চিন্তা নেই বলেও জানান তিনি। সর্বপ্রথম ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশে এ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। তবে সেই চিকিৎসাযন্ত্র বাংলাদেশে আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

অবশেষে ডায়াবেটিস চিকিৎসার মেশিন উদ্ভাবন

আপডেট সময় ০৪:২৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০১৭

অাকাশ আইসিটি ডেস্ক:

অন্ধ মানুষদের পথচলার সহায়তায় বিশেষ ধরনের যন্ত্র (ব্লাইন্ড-আই) উদ্ভাবন করেছিলেন সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু মিয়া। এবার তিনি ‘ভ্যাকুয়াম অ্যাসিস্টেড ক্লোজার থেরাপ’ বা ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবন করলেন ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। এ মেশিন দিয়ে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ ও ‘বেড সোর’ রোগীদের গভীর-অগভীর সব ধরনের ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করা সম্ভব।

ভ্যাকুয়াম মেশিন তৈরিতে তাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন ডায়াবেটিস ও ডায়াবেটিক ফুট চিকিৎসক ডা. মঞ্জুর আহমদ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও ডা. মঞ্জুর আহমদের ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়া রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং ছিল রাজু মিয়ার জন্য। তবুও একটানা ২ মাস নিজের বাসা আর ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২ এ কাজ করে উদ্ভাবন করেন ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। আর এ কাজে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে রোগীদের মাঝে সেবাও প্রদান করা হচ্ছে।

উদ্ভাবক রাজু মিয়া বলেন, “দেশি-বিদেশি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। এ যন্ত্রটি তৈরি করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। রাত-দিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। যন্ত্রটি একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের সাহায্যে চলে। সেই সফটওয়্যার তৈরি করতেই লেগেছে বেশ কিছুটা সময়। পরে কন্ট্রোলার সার্কিট বোর্ড তৈরি করি। এ বোর্ড পুরো ভ্যাকুয়াম মেশিনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ যন্ত্রের মেকানিক্যাল কাজটাও জটিল ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি।”

ক্ষতস্থান ভালো করে তোলার চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’। ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’ কীভাবে কাজ করে? এ ব্যাপারে ডা. মঞ্জুর আহমদ জানালেন, ভ্যাকুয়াম থেরাপি একটি বাস্তবধর্মী ক্ষত চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ক্ষত বা অপারেশন সাইট থেকে রক্ত বা তরল শোষণ করা হয়। বিশেষ ধরনের একটি ফোম ক্ষতস্থানে লাগানো হয়। এরপর বিশেষ ধরনের পাতলা ফিল্ম দিয়ে ক্ষতস্থান সম্পূর্ণ ঢেকে (সিল) দেয়া হয়। সিলের ভেতর থেকে একটি পাইপ ভ্যাকুয়াম মেশিনের পাম্পে সংযুক্ত করা হয়। পাম্পের সাহায্যে ক্ষতস্থানের তরল পদার্থ ও সংক্রামক উপাদানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে টেনে নেয়া হয়। তিনি জানান, ভ্যাকুয়াম মেশিন তৈরি করার পর বেশ ক’জন ডায়াবেটিক ফুট ও বেড সোর রোগীর চিকিৎসায় এটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়। সে পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছে রাজুর তৈরি ভ্যাকুয়াম মেশিন। এ সফলতার পর বর্তমানে সিলেটে ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টারে এর মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আপাতত এ যন্ত্র নিয়ে বাণিজ্যিক কোনো চিন্তা নেই বলেও জানান তিনি। সর্বপ্রথম ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশে এ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। তবে সেই চিকিৎসাযন্ত্র বাংলাদেশে আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।