ঢাকা ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘরের জলে চোখের জল

অাকাশ নিউজ ডেস্কঃ

ঘরে হাঁটুপানি। ইট দিয়ে খাটটি উঁচু করা হয়েছে, তবু পানি দমে নেই। জলমগ্ন হয়ে আছে ফ্রিজ আর সাইকেল। গ্যাসের চুলাও পানির তলে। এমন পরিবেশে বাস করছেন যাত্রাবাড়ীর রহমতপুরের রাবেয়া আক্তার। তিনি বললেন, ‘আমি আর পারছি না। প্রায় এক মাস ধরে পানির মধ্যে আছি। কষ্টের টাকায় কেনা সব জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।’

রাবেয়া আক্তারের মতো রাজধানী ডেমরা ও যাত্রাবাড়ীর কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী। পানিতে নষ্ট হচ্ছে ঘরের দরকারি ও দামি জিনিস। চোখের সামনে ভিজে অকেজো হচ্ছে অনেক শৌখিন জিনিস। বসে বসে চোখের জল ফেলা ছাড়া কিচ্ছু করার নেই। যাঁদের ঘরে শিশুসন্তান রয়েছে, তাঁদের জলবন্দী জীবনে রাত-দিন তাড়া করছে উৎকণ্ঠা—যদি কিছু ঘটে! এই পানিতে সাপখোপের মতো ক্ষতিকর প্রাণী এসে ঘটিয়ে দিতে পারে অঘটন। আর বিদ্যুতের জীবন্ত কোনো তার যদি একবার এই পানির নাগাল পায়, এর ভয়াবহতার বর্ণনা আর না-ই বা দিলাম। জলাবদ্ধ পানিতে ময়লা, আবর্জনা আর বর্জ্য মিশে এর মধ্যে তা দুর্গন্ধ আর নানা জীবাণুর জন্ম দিয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন অনেকে এর মধ্যে দূষিত পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে।

যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অফিসকক্ষ। ছবি: আসাদুজ্জামান
যাত্রাবাড়ী ও ডেমরার জলাবদ্ধতার কারণ জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-১) আবদুল আওয়াল মিয়া বলেন, ‘এক দিনের বৃষ্টিতে যে পরিমাণ পানি যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় জমে, তা সেঁচতে সাত দিন সময় লাগে। যে কারণে বৃষ্টি হলে এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে। এর আগ পর্যন্ত ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষের কষ্ট স্বীকার করতেই হবে।

আজ বুধবার যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, বৃষ্টির পানিতে বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, কারখানায় পানি। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অফিসকক্ষে হাঁটুপানি। কম্পিউটারসহ অন্যান্য আসবাব টেবিলের ওপর রাখা আছে। সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী বললেন, বৃষ্টি হলে কলেজে পানি ওঠে। পানির মধ্যে ক্লাস করতে হয়। আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। যাত্রাবাড়ীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ডেমরার বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি। পানির মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

হাঁটুপানিতে এক ভুক্তভোগী। ছবিটি যাত্রাবাড়ীর রহমতপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আসাদুজ্জামান
ডেমরার রসুলনগরের বাসিন্দা আবদুর রব। এক মাস ধরে তাঁর ঘরে পানি। তিনি বলছিলেন, পানি হলে রসুলনগরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তায় থাকে হাঁটুপানি। ডেমরার পশ্চিম বামৈল এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলছিলেন, রাস্তায় এত পানি যে হাটবাজারে যাওয়া যাচ্ছে না। সীমাহীন ভোগান্তিতে আছেন তাঁরা। ডেমরার রসুলনগর, পশ্চিম বামৈল এলাকা ছাড়াও যাত্রাবাড়ীর ডগাই, রহমতপুরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটুপানি।
ডেমরার সারুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, বৃষ্টির পানিতে অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। মানুষ সীমাহীন কষ্টে আছে।

রহমতপুরের বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলছিলেন, ‘পানির মধ্যে আর কত দিন বসবাস করতে হবে? এভাবে কি মানুষ বসবাস করতে পারে?’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

ঘরের জলে চোখের জল

আপডেট সময় ০২:৫৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০১৭

অাকাশ নিউজ ডেস্কঃ

ঘরে হাঁটুপানি। ইট দিয়ে খাটটি উঁচু করা হয়েছে, তবু পানি দমে নেই। জলমগ্ন হয়ে আছে ফ্রিজ আর সাইকেল। গ্যাসের চুলাও পানির তলে। এমন পরিবেশে বাস করছেন যাত্রাবাড়ীর রহমতপুরের রাবেয়া আক্তার। তিনি বললেন, ‘আমি আর পারছি না। প্রায় এক মাস ধরে পানির মধ্যে আছি। কষ্টের টাকায় কেনা সব জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।’

রাবেয়া আক্তারের মতো রাজধানী ডেমরা ও যাত্রাবাড়ীর কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী। পানিতে নষ্ট হচ্ছে ঘরের দরকারি ও দামি জিনিস। চোখের সামনে ভিজে অকেজো হচ্ছে অনেক শৌখিন জিনিস। বসে বসে চোখের জল ফেলা ছাড়া কিচ্ছু করার নেই। যাঁদের ঘরে শিশুসন্তান রয়েছে, তাঁদের জলবন্দী জীবনে রাত-দিন তাড়া করছে উৎকণ্ঠা—যদি কিছু ঘটে! এই পানিতে সাপখোপের মতো ক্ষতিকর প্রাণী এসে ঘটিয়ে দিতে পারে অঘটন। আর বিদ্যুতের জীবন্ত কোনো তার যদি একবার এই পানির নাগাল পায়, এর ভয়াবহতার বর্ণনা আর না-ই বা দিলাম। জলাবদ্ধ পানিতে ময়লা, আবর্জনা আর বর্জ্য মিশে এর মধ্যে তা দুর্গন্ধ আর নানা জীবাণুর জন্ম দিয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন অনেকে এর মধ্যে দূষিত পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে।

যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অফিসকক্ষ। ছবি: আসাদুজ্জামান
যাত্রাবাড়ী ও ডেমরার জলাবদ্ধতার কারণ জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-১) আবদুল আওয়াল মিয়া বলেন, ‘এক দিনের বৃষ্টিতে যে পরিমাণ পানি যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় জমে, তা সেঁচতে সাত দিন সময় লাগে। যে কারণে বৃষ্টি হলে এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে। এর আগ পর্যন্ত ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষের কষ্ট স্বীকার করতেই হবে।

আজ বুধবার যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, বৃষ্টির পানিতে বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, কারখানায় পানি। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অফিসকক্ষে হাঁটুপানি। কম্পিউটারসহ অন্যান্য আসবাব টেবিলের ওপর রাখা আছে। সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী বললেন, বৃষ্টি হলে কলেজে পানি ওঠে। পানির মধ্যে ক্লাস করতে হয়। আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। যাত্রাবাড়ীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ডেমরার বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি। পানির মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

হাঁটুপানিতে এক ভুক্তভোগী। ছবিটি যাত্রাবাড়ীর রহমতপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আসাদুজ্জামান
ডেমরার রসুলনগরের বাসিন্দা আবদুর রব। এক মাস ধরে তাঁর ঘরে পানি। তিনি বলছিলেন, পানি হলে রসুলনগরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তায় থাকে হাঁটুপানি। ডেমরার পশ্চিম বামৈল এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলছিলেন, রাস্তায় এত পানি যে হাটবাজারে যাওয়া যাচ্ছে না। সীমাহীন ভোগান্তিতে আছেন তাঁরা। ডেমরার রসুলনগর, পশ্চিম বামৈল এলাকা ছাড়াও যাত্রাবাড়ীর ডগাই, রহমতপুরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটুপানি।
ডেমরার সারুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, বৃষ্টির পানিতে অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। মানুষ সীমাহীন কষ্টে আছে।

রহমতপুরের বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলছিলেন, ‘পানির মধ্যে আর কত দিন বসবাস করতে হবে? এভাবে কি মানুষ বসবাস করতে পারে?’