ঢাকা ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিজার্ভ চুরি জড়িত বিদেশিদের গ্রেফতার চেয়ে সিআইডির চিঠি

অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত বিদেশিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই চিঠির জবাব পেলেই রিজার্ভ চুরি মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা জটিলতায় রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে সময় লাগছে। সিআইডি কর্মকর্তাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও আরও আটটি দেশের নাগরিকরা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত। তবে তদন্তের একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রসঙ্গে অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চুরির সঙ্গে জড়িত বিদেশিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যও জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।’

চিঠির জবাব কবে নাগাদ পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মর্জির ওপর নির্ভর করছে। সেগুলো পেলেই দ্রুত তদন্তের ইতি টেনে চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে।’

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ছাড়া আরও আটটি দেশের নাগারিক জড়িত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশি ১০/১২ জন ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ৩০/৩৫ জনের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

ঘটনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত এখন তাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের যেসব নাগরিক এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে ওইসব দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হয়। চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব নয়। রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত দেশগুলো হলো- ফিলিপাইন, হংকং, ম্যাকাও, চায়না, শ্রীলংকা, মিশর, সিঙ্গাপুর ও জাপান।

সিআইডি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সবগুলো বিভাগের একটি সমন্বিত টিম মামলার তদন্ত করছে। অর্থ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার হলেও ফিলিপাইনে যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারের বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়। আর্থিক খাতের এত বড় দুর্ঘটনার এক মাস পার হওয়ার পরও বিষয়টি অজানা ছিল অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে। আর সে ঘটনার জের ধরেই পদত্যাগ করেন ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এ ঘটনায় গত বছরের ১৫ মার্চ সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে সরকার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কাজ শুরুর এক মাসের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও আজও তা প্রকাশ করা হয়নি। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন- ব্যাংকিং ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস ও বুয়েটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

রিজার্ভ চুরি জড়িত বিদেশিদের গ্রেফতার চেয়ে সিআইডির চিঠি

আপডেট সময় ০৪:৪৯:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০১৭

অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত বিদেশিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই চিঠির জবাব পেলেই রিজার্ভ চুরি মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা জটিলতায় রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে সময় লাগছে। সিআইডি কর্মকর্তাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও আরও আটটি দেশের নাগরিকরা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত। তবে তদন্তের একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রসঙ্গে অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চুরির সঙ্গে জড়িত বিদেশিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যও জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।’

চিঠির জবাব কবে নাগাদ পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মর্জির ওপর নির্ভর করছে। সেগুলো পেলেই দ্রুত তদন্তের ইতি টেনে চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হবে।’

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ছাড়া আরও আটটি দেশের নাগারিক জড়িত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশি ১০/১২ জন ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ৩০/৩৫ জনের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

ঘটনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত এখন তাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশের যেসব নাগরিক এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে ওইসব দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হয়। চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব নয়। রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত দেশগুলো হলো- ফিলিপাইন, হংকং, ম্যাকাও, চায়না, শ্রীলংকা, মিশর, সিঙ্গাপুর ও জাপান।

সিআইডি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সবগুলো বিভাগের একটি সমন্বিত টিম মামলার তদন্ত করছে। অর্থ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার হলেও ফিলিপাইনে যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারের বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়। আর্থিক খাতের এত বড় দুর্ঘটনার এক মাস পার হওয়ার পরও বিষয়টি অজানা ছিল অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে। আর সে ঘটনার জের ধরেই পদত্যাগ করেন ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এ ঘটনায় গত বছরের ১৫ মার্চ সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে সরকার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কাজ শুরুর এক মাসের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও আজও তা প্রকাশ করা হয়নি। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন- ব্যাংকিং ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস ও বুয়েটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।