ঢাকা ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বেকারি পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ

আকাশ জাতীয় ডেস্ক:

হাতে তৈরি এবং মেশিনজাত (নন ব্র্যান্ড) পাউরুটি, বিস্কুট, কেকজাতীয় খাদ্যের দাম ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ী সমিতি। রাজধানীর প্রায় সবখানেই ১০ টাকার রুটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। অন্যান্য পণ্যের দামও প্রায় সমান। ১০ টাকায় কোনো বেকারি পণ্যের সংখ্যা এখন হাতেগোণা। এসব খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি, ডালডা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারক সমিতি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক-দুই মাস ধরে এসব খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি, ডালডা এবং তেলের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ময়দায় দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। চিনির কেজিতে বেড়েছে আট থেকে ১০ টাকা, প্রতি কেজি ডালডায় বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে।

বেকারিতে হাতে তৈরি বা প্রক্রিয়াজাত মেশিনে পাউরুটি, বনরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের কনফেকশনারি পণ্য তৈরি করা হয়। ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর ফলে এতদিন ১০০ টাকায় যে বিস্কুট বা কেক পাওয়া যেত তা কিনতে এখন গুণতে হচ্ছে অন্তত ১২০ টাকা।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন মুদি ও চা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেকারিতে তৈরি করা ১০ টাকার পাউরুটির দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকা, ১৫ টাকার রুটি পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা ও ৪০ টাকার রুটি ৪৫ টাকা করা হয়েছে। পরিমাণভেদে এসব রুটিতে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। একইভাবে পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন আকারের প্যাকেটজাত কেক, রুটি ও বিস্কুটের দাম।

উৎপাদনকারীরা বলছেন, সব মিলিয়ে তাদের প্রতিটি পণ্য তৈরিতে খরচ পড়ছে সাড়ে নয় থেকে ১০ টাকার মতো। ব্যবসায়ীরা কিনছেন সাড়ে বারো টাকায়, যা ক্রেতাদের হাতে পৌছাচ্ছে ১৫ টাকা করে।

মগবাজারের ফারিহা ফুডের বিক্রয়কর্মী আরমান নীরব বলেন, কমবেশি সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। প্রতিটি রুটির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা করে, প্রতি প্যাকেট ১ কেজি বিস্কুটের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। খরচ বেড়ে যাওয়ায় মালিক দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

মগবাজারের আরেক বেকারি শপ আল্লাহর দানের ম্যানেজার কামাল উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশী চাপ পড়ছে কাঁচামালে। কিছুদিন আগে ১ ড্রাম তেল কিনেছি ২৭,০০০ টাকা দিয়ে, এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকায়। প্রতি মাসে গ্যাস বিল আসে এক লাখ থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা। এছাড়া কারিগরের বেতন, অন্যান্য খরচসহ অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, পণ্যের দাম না বাড়ালে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দাম বাড়ানোর ফলে বিক্রিও কমে গেছে। কারণ এই খাবারগুলোর মূল ক্রেতা হলো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। বাড়তি দাম দিয়ে অনেকেই খাবার কিনতে পারেন না। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের চা দোকানদার ছগীর আহমেদ বলেন, দাম বাড়ার ফলে বেঁচা বিক্রি কমে গেছে। চায়ের দোকানের বেশীরভাগ ক্রেতা হলো খেটে খাওয়া মানুষ। বেশী দামের ফলে অনেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার কিনতে পারে না।

আরেক দোকানি শাহ আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, চাপ আমাদের উপরেও পড়েছে। অল্প পুজির ফলে বেশী পণ্য রাখতে পারছি না, বিক্রিও কমে যাচ্ছে।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বেকারি পণ্যের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। বাজারে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বেকারি পণ্যের দাম সমন্বয়ের জন্য গত ৩১ মে থেকে হঠাৎ করেই হস্তচালিত বেকারি মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘটে যান। ফলে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বেকারি পণ্যের সরবরাহ বন্ধ ছিল। এরপরই এসব খাদ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। তেল, আটা, ময়দাসহ বেকারি পণ্য তৈরির সব উপাদানের দাম বেড়েছে। কয়েক মাস ধরে লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে। দাম না বাড়ালে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ৫০০ বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বেকারি মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

করোনার আগে সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার হস্তচালিত বেকারি ছিল। ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, মহামারিকালে ৫০০ থেকে ৬০০ বেকারি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাদের অনেকে ব্যবসায় ফেরেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবারও পাঁচ শতাধিক বেকারি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেকারি পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ

আপডেট সময় ১১:৪০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২

আকাশ জাতীয় ডেস্ক:

হাতে তৈরি এবং মেশিনজাত (নন ব্র্যান্ড) পাউরুটি, বিস্কুট, কেকজাতীয় খাদ্যের দাম ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ী সমিতি। রাজধানীর প্রায় সবখানেই ১০ টাকার রুটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। অন্যান্য পণ্যের দামও প্রায় সমান। ১০ টাকায় কোনো বেকারি পণ্যের সংখ্যা এখন হাতেগোণা। এসব খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি, ডালডা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারক সমিতি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক-দুই মাস ধরে এসব খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত ময়দা, চিনি, ডালডা এবং তেলের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ময়দায় দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। চিনির কেজিতে বেড়েছে আট থেকে ১০ টাকা, প্রতি কেজি ডালডায় বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে।

বেকারিতে হাতে তৈরি বা প্রক্রিয়াজাত মেশিনে পাউরুটি, বনরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের কনফেকশনারি পণ্য তৈরি করা হয়। ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর ফলে এতদিন ১০০ টাকায় যে বিস্কুট বা কেক পাওয়া যেত তা কিনতে এখন গুণতে হচ্ছে অন্তত ১২০ টাকা।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন মুদি ও চা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেকারিতে তৈরি করা ১০ টাকার পাউরুটির দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকা, ১৫ টাকার রুটি পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা ও ৪০ টাকার রুটি ৪৫ টাকা করা হয়েছে। পরিমাণভেদে এসব রুটিতে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। একইভাবে পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন আকারের প্যাকেটজাত কেক, রুটি ও বিস্কুটের দাম।

উৎপাদনকারীরা বলছেন, সব মিলিয়ে তাদের প্রতিটি পণ্য তৈরিতে খরচ পড়ছে সাড়ে নয় থেকে ১০ টাকার মতো। ব্যবসায়ীরা কিনছেন সাড়ে বারো টাকায়, যা ক্রেতাদের হাতে পৌছাচ্ছে ১৫ টাকা করে।

মগবাজারের ফারিহা ফুডের বিক্রয়কর্মী আরমান নীরব বলেন, কমবেশি সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। প্রতিটি রুটির দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা করে, প্রতি প্যাকেট ১ কেজি বিস্কুটের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। খরচ বেড়ে যাওয়ায় মালিক দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

মগবাজারের আরেক বেকারি শপ আল্লাহর দানের ম্যানেজার কামাল উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশী চাপ পড়ছে কাঁচামালে। কিছুদিন আগে ১ ড্রাম তেল কিনেছি ২৭,০০০ টাকা দিয়ে, এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকায়। প্রতি মাসে গ্যাস বিল আসে এক লাখ থেকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা। এছাড়া কারিগরের বেতন, অন্যান্য খরচসহ অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, পণ্যের দাম না বাড়ালে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দাম বাড়ানোর ফলে বিক্রিও কমে গেছে। কারণ এই খাবারগুলোর মূল ক্রেতা হলো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। বাড়তি দাম দিয়ে অনেকেই খাবার কিনতে পারেন না। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের চা দোকানদার ছগীর আহমেদ বলেন, দাম বাড়ার ফলে বেঁচা বিক্রি কমে গেছে। চায়ের দোকানের বেশীরভাগ ক্রেতা হলো খেটে খাওয়া মানুষ। বেশী দামের ফলে অনেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার কিনতে পারে না।

আরেক দোকানি শাহ আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, চাপ আমাদের উপরেও পড়েছে। অল্প পুজির ফলে বেশী পণ্য রাখতে পারছি না, বিক্রিও কমে যাচ্ছে।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বেকারি পণ্যের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। বাজারে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বেকারি পণ্যের দাম সমন্বয়ের জন্য গত ৩১ মে থেকে হঠাৎ করেই হস্তচালিত বেকারি মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘটে যান। ফলে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বেকারি পণ্যের সরবরাহ বন্ধ ছিল। এরপরই এসব খাদ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বেকারি পণ্য প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। তেল, আটা, ময়দাসহ বেকারি পণ্য তৈরির সব উপাদানের দাম বেড়েছে। কয়েক মাস ধরে লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে। দাম না বাড়ালে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ৫০০ বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বেকারি মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

করোনার আগে সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার হস্তচালিত বেকারি ছিল। ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, মহামারিকালে ৫০০ থেকে ৬০০ বেকারি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাদের অনেকে ব্যবসায় ফেরেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবারও পাঁচ শতাধিক বেকারি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।