ঢাকা ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হবে: ইশরাক ব্যাটিং ব্যর্থতায় টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগাররা ইসরাইল আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তির সবচেয়ে বড় হুমকি: এরদোগান নিজ বাড়ির সামনে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা অপরাধ করলে রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না: আইজিপি আগামী বছর রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা জেলেনস্কির সৌদি আরবের মক্কায় ভারী বৃষ্টির কারণে হঠাৎ বন্যা “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে সকল সম্প্রদায় ও নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে” “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল পরিকল্পনাকারী একমাত্র তারেক রহমান” অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পররাষ্ট্রনীতিতে আত্মসম্মানের উপর গুরুত্ব দেয় এবং নতজানু নীতিতে বিশ্বাস করে না,:উপদেষ্টা নাহিদ

অনেক স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর…

অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:

শোকাবহ আগস্ট আবার ফিরে এলো। এই মাসে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। একটি সুন্দর গন্তব্যে যখন যাচ্ছিল সেখান থেকে একটা বড় বিচ্যুতি ঘটেছিল। দেশের সমস্যার কোনো অন্ত ছিল না। ১৯৭৪-এর প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থার মোকাবিলাও আমরা করেছি, কিন্তু মানুষের ভেতর উদ্দীপনা ছিল, সহনশীলতা ছিল, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ছিল এবং অসাম্প্রদায়িক একটা চেতনাও ছিল। কিন্তু ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সেই চেতনা লুপ্ত করার আয়োজন শুরু হয়েছে, পুঁজি শাসন ঝেঁকে বসেছে, মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে এবং সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দশটি বছরও পার হয়নি, আমরা গণতন্ত্র হারিয়েছি সমাজতন্ত্রের আদর্শ বলে আর কিছুই থাকলো না এবং সমাজে বিত্তশালী এবং ক্ষমতাসীনদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।

বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ছিল। তার কিছু কিছু বাস্তবায়ন স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু সেগুলো অধরাই রয়ে গেছে। তার একটি কারণ, দেশের ভেতরে নানা অপশক্তির তত্পরতা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর দলের ভেতর আদর্শহীন কিছু মানুষের ক্ষমতা এবং বিত্তের প্রতি লোভ। যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭৫-এ সে আওয়ামী লীগ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তার কিছু সহকর্মী ঘাতকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন, অনেকে গা ঢাকা দিয়েছিল। আরও কেউ কেউ ১৯৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এলেন তাদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেধেছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাস্তায় কোনো মিছিল হয়নি, কোনো প্রতিবাদ প্রতিরোধ হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের’ ‘রোজনামচা’ পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি বঙ্গবন্ধু হয়তো জানতেন তার সহকর্মীদের ভেতর অনেকেই সুবিধাবাদীদের খাতায় নাম লেখাবেন। ওই বইতে একজনের কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘সে আমার সামনে এক কথা বলে বাইরে গিয়ে বলে অন্যকথা।’ এই সহকর্মী এবং অনুসারীদের সংখ্যাধিকই আওয়ামী লীগকে বহুদিন দাঁড়াতে দেয়নি।

বঙ্গবন্ধুর একটি স্বপ্ন ছিল দেশটি আত্মনির্ভরশীল হবে। এর মানুষ দু’বেলা আহার পাবে, মাথার উপর চাল থাকবে, মানুষেরা শিক্ষিত হবে, সকল মানুষের কর্মসংস্থান ও সুস্বাস্থ্য থাকবে এবং সমাজে সংহতি থাকবে। অনেক দেরিতে হলেও দেশটি সেদিকে যাত্রা করছে। এর পেছনে বহু মানুষের পরিশ্রম এবং মেধা রয়েছে। এদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এদের ভেতর আওয়ামী লীগের সমর্থকও যেমন আছেন, তেমনি অন্যদলের মতাদর্শের সমর্থকরাও আছেন-এই বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষে বুঝতে হবে বাংলাদেশের মানুষ নানা দলে ও পথের অনুসারী হলেও তারা দেশটিকে সর্বাগ্রে রাখেন। এই সত্যটি স্বীকার করে আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তিটি আরও বিস্তৃত এবং সুদৃঢ় করতে হবে।

জনগণের উপর রাষ্ট্রের নিপীড়নকে ঘৃণা করতেন তিনি। বিনা বিচারে মানুষকে অন্তরীণ রাখাকে তিনি অপরাধ হিসাবে গণ্য করতেন। দুঃখি মানুষের জন্য তার সমবেদনা ছিল এবং যারা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দুর্বলের উপর অত্যাচার করে তাদের প্রতি তিনি ক্ষমাহীন ছিলেন। এই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে আমরা প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারবো যদি তার এই আদর্শ এবং চিন্তা-ভাবনাগুলোকে আমরা স্মরণ রেখে কাজ করতে পারি। তারই হাতে গড়া দলটি এখন ক্ষমতায়, এখনও দুর্বলের প্রতি নিপীড়ন চলছে, সাহসী সাংবাদিকতা বিপন্ন, ক্ষমতা এবং বিত্তের প্রভাবে দুর্বল আরও অরক্ষিত। এই বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিপরীতই দাঁড়ায়। আমি আশা করবো বঙ্গবন্ধু গরিবের জন্য, দুর্বলের জন্য, সাহসী এবং আদর্শবান মানুষের জন্য, স্বপ্ন দেখা তরুণদের জন্য—যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখবেন সেই বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগোবার অবিচল আস্থার ঘোষণা দিয়ে আমরা তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করবো।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অনেক স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর…

আপডেট সময় ০২:৩৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭

অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:

শোকাবহ আগস্ট আবার ফিরে এলো। এই মাসে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। একটি সুন্দর গন্তব্যে যখন যাচ্ছিল সেখান থেকে একটা বড় বিচ্যুতি ঘটেছিল। দেশের সমস্যার কোনো অন্ত ছিল না। ১৯৭৪-এর প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থার মোকাবিলাও আমরা করেছি, কিন্তু মানুষের ভেতর উদ্দীপনা ছিল, সহনশীলতা ছিল, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ছিল এবং অসাম্প্রদায়িক একটা চেতনাও ছিল। কিন্তু ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সেই চেতনা লুপ্ত করার আয়োজন শুরু হয়েছে, পুঁজি শাসন ঝেঁকে বসেছে, মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে এবং সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দশটি বছরও পার হয়নি, আমরা গণতন্ত্র হারিয়েছি সমাজতন্ত্রের আদর্শ বলে আর কিছুই থাকলো না এবং সমাজে বিত্তশালী এবং ক্ষমতাসীনদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।

বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ছিল। তার কিছু কিছু বাস্তবায়ন স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু সেগুলো অধরাই রয়ে গেছে। তার একটি কারণ, দেশের ভেতরে নানা অপশক্তির তত্পরতা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর দলের ভেতর আদর্শহীন কিছু মানুষের ক্ষমতা এবং বিত্তের প্রতি লোভ। যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ১৯৭৫-এ সে আওয়ামী লীগ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তার কিছু সহকর্মী ঘাতকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন, অনেকে গা ঢাকা দিয়েছিল। আরও কেউ কেউ ১৯৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এলেন তাদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেধেছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাস্তায় কোনো মিছিল হয়নি, কোনো প্রতিবাদ প্রতিরোধ হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের’ ‘রোজনামচা’ পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি বঙ্গবন্ধু হয়তো জানতেন তার সহকর্মীদের ভেতর অনেকেই সুবিধাবাদীদের খাতায় নাম লেখাবেন। ওই বইতে একজনের কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘সে আমার সামনে এক কথা বলে বাইরে গিয়ে বলে অন্যকথা।’ এই সহকর্মী এবং অনুসারীদের সংখ্যাধিকই আওয়ামী লীগকে বহুদিন দাঁড়াতে দেয়নি।

বঙ্গবন্ধুর একটি স্বপ্ন ছিল দেশটি আত্মনির্ভরশীল হবে। এর মানুষ দু’বেলা আহার পাবে, মাথার উপর চাল থাকবে, মানুষেরা শিক্ষিত হবে, সকল মানুষের কর্মসংস্থান ও সুস্বাস্থ্য থাকবে এবং সমাজে সংহতি থাকবে। অনেক দেরিতে হলেও দেশটি সেদিকে যাত্রা করছে। এর পেছনে বহু মানুষের পরিশ্রম এবং মেধা রয়েছে। এদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এদের ভেতর আওয়ামী লীগের সমর্থকও যেমন আছেন, তেমনি অন্যদলের মতাদর্শের সমর্থকরাও আছেন-এই বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষে বুঝতে হবে বাংলাদেশের মানুষ নানা দলে ও পথের অনুসারী হলেও তারা দেশটিকে সর্বাগ্রে রাখেন। এই সত্যটি স্বীকার করে আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তিটি আরও বিস্তৃত এবং সুদৃঢ় করতে হবে।

জনগণের উপর রাষ্ট্রের নিপীড়নকে ঘৃণা করতেন তিনি। বিনা বিচারে মানুষকে অন্তরীণ রাখাকে তিনি অপরাধ হিসাবে গণ্য করতেন। দুঃখি মানুষের জন্য তার সমবেদনা ছিল এবং যারা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দুর্বলের উপর অত্যাচার করে তাদের প্রতি তিনি ক্ষমাহীন ছিলেন। এই আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে আমরা প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারবো যদি তার এই আদর্শ এবং চিন্তা-ভাবনাগুলোকে আমরা স্মরণ রেখে কাজ করতে পারি। তারই হাতে গড়া দলটি এখন ক্ষমতায়, এখনও দুর্বলের প্রতি নিপীড়ন চলছে, সাহসী সাংবাদিকতা বিপন্ন, ক্ষমতা এবং বিত্তের প্রভাবে দুর্বল আরও অরক্ষিত। এই বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিপরীতই দাঁড়ায়। আমি আশা করবো বঙ্গবন্ধু গরিবের জন্য, দুর্বলের জন্য, সাহসী এবং আদর্শবান মানুষের জন্য, স্বপ্ন দেখা তরুণদের জন্য—যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখবেন সেই বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগোবার অবিচল আস্থার ঘোষণা দিয়ে আমরা তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করবো।