ঢাকা ০৬:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীন-ভারত দ্বন্দ্ব: যুদ্ধের জন্য কার প্রস্তুতি কতটা

অাকাশ আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:

প্রতিদিন একটু একটু করে সুর চড়াচ্ছে চীন। ডোকালাম এলাকা থেকে ভারতীয় সেনা না সরালে চীন সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, বার বার এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কখনও চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, কখনও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমের হুমকি আসছে ভারতের প্রতি। তবে যাবতীয় হুমকির মুখে অবিচল দিল্লি। ১৯৬২ সালের মতো আরও একটা সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। চীনের মুখপাত্ররা ভারতকে ১৯৬২ এর যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, ১৯৬২ সালের ভারতের সঙ্গে ২০১৭’র ভারতকে গুলিয়ে ফেললে চীন মহা ভুল করবে।

যদি শেষ পর্যন্ত সত্যিই শুরু হয় চীন-ভারত যুদ্ধ, তা হলে ফল কী হতে পারে? ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার দাবি, সৈন্যসংখ্যা আর অস্ত্রশস্ত্রের বহরই যে সব সময় যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করে, তা নয়। রণকৌশল, ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশগত বিষয়, আন্তর্জাতিক সমীকরণ এমন অনেক কিছুই যুদ্ধের ভবিষ্যত্ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতাও খুব জরুরি। এই মুহূর্তে চীনা বাহিনীর মুখোমুখি হতে কতটা প্রস্তুত ভারতীয় সেনা?

সেনাবাহিনীর আকারে ভারতের চেয়ে চীন বেশ এগিয়ে। কিন্তু চীনের ভৌগোলিক সীমা ভারতের চেয়ে অনেক বড়, তাই স্বাভাবিক ভাবেই বড় বাহিনী প্রয়োজন তাদের। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স বা জিএফপি সূচিতে কিন্তু চীন এবং ভারত পাশাপাশিই রয়েছে। কোনও দেশের একক সামরিক সক্ষমতার নিরিখে ওই সূচিতে আমেরিকা রয়েছে প্রথম স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া। তিনে চীন। আর চারেই রয়েছে ভারত।

ভারতের ট্যাঙ্ক বাহিনী চির কালই বিশ্বের অনেক দেশের কাছে সমীহের বিষয়। চীনের চেয়ে ভারতের ট্যাঙ্কের সংখ্যা বেশ কম। কিন্তু আর্মার্ড ফাইটিং ভেহিকল বা সাঁজোয়া গাড়ির সংখ্যায় ভারত অনেকটা এগিয়ে। স্থলসীমান্তে যুদ্ধের জন্য গোলাবর্ষণের সক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি। দু’দেশের হাতেই বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে। কোনওটি ভারতের হাতে বেশি, কোনওটি চীনের হাতে। কিন্তু মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় চীন ভারতের চেয়ে বেশ এগিয়ে। এয়ারক্র্যাফটের সংখ্যায় চীন ভারতের চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নয়। ভারতের হাতে যে সংখ্যক যুদ্ধবিমান রয়েছে, নিজেদের আকাশসীমার সুরক্ষায় তা যথেষ্ট বলেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন। একসঙ্গে একাধিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি লড়তে না হয়, তা হলে ভারতীয় বিমান বহর চীনের সঙ্গে যুদ্ধ চালাতে সক্ষম। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ভারতের হাতে বেশ কম। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর কর্তাদের দাবি, তাদের বাহিনীর হাতে সুখোই-৩০ এমেকেআই-এর মতো প্রবল শক্তিশালী যুদ্ধবিমান পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকায় অ্যাটাক হেলিকপ্টারের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নেই। ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা চীনের হাতে ভারতের চেয়ে অনেকটাই বেশি। তবে যে পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের হাতে রয়েছে, কোনও একটি যুদ্ধে তত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দরকার পড়ে না বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাতেও চীন অনেকটা এগিয়ে ভারতের চেয়ে। তবে চীন এবং ভারতের মতো দু’টি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

চীন-ভারত দ্বন্দ্ব: যুদ্ধের জন্য কার প্রস্তুতি কতটা

আপডেট সময় ০১:৫৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০১৭

অাকাশ আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:

প্রতিদিন একটু একটু করে সুর চড়াচ্ছে চীন। ডোকালাম এলাকা থেকে ভারতীয় সেনা না সরালে চীন সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, বার বার এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কখনও চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, কখনও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমের হুমকি আসছে ভারতের প্রতি। তবে যাবতীয় হুমকির মুখে অবিচল দিল্লি। ১৯৬২ সালের মতো আরও একটা সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। চীনের মুখপাত্ররা ভারতকে ১৯৬২ এর যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, ১৯৬২ সালের ভারতের সঙ্গে ২০১৭’র ভারতকে গুলিয়ে ফেললে চীন মহা ভুল করবে।

যদি শেষ পর্যন্ত সত্যিই শুরু হয় চীন-ভারত যুদ্ধ, তা হলে ফল কী হতে পারে? ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার দাবি, সৈন্যসংখ্যা আর অস্ত্রশস্ত্রের বহরই যে সব সময় যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করে, তা নয়। রণকৌশল, ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশগত বিষয়, আন্তর্জাতিক সমীকরণ এমন অনেক কিছুই যুদ্ধের ভবিষ্যত্ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতাও খুব জরুরি। এই মুহূর্তে চীনা বাহিনীর মুখোমুখি হতে কতটা প্রস্তুত ভারতীয় সেনা?

সেনাবাহিনীর আকারে ভারতের চেয়ে চীন বেশ এগিয়ে। কিন্তু চীনের ভৌগোলিক সীমা ভারতের চেয়ে অনেক বড়, তাই স্বাভাবিক ভাবেই বড় বাহিনী প্রয়োজন তাদের। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স বা জিএফপি সূচিতে কিন্তু চীন এবং ভারত পাশাপাশিই রয়েছে। কোনও দেশের একক সামরিক সক্ষমতার নিরিখে ওই সূচিতে আমেরিকা রয়েছে প্রথম স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া। তিনে চীন। আর চারেই রয়েছে ভারত।

ভারতের ট্যাঙ্ক বাহিনী চির কালই বিশ্বের অনেক দেশের কাছে সমীহের বিষয়। চীনের চেয়ে ভারতের ট্যাঙ্কের সংখ্যা বেশ কম। কিন্তু আর্মার্ড ফাইটিং ভেহিকল বা সাঁজোয়া গাড়ির সংখ্যায় ভারত অনেকটা এগিয়ে। স্থলসীমান্তে যুদ্ধের জন্য গোলাবর্ষণের সক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি। দু’দেশের হাতেই বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে। কোনওটি ভারতের হাতে বেশি, কোনওটি চীনের হাতে। কিন্তু মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় চীন ভারতের চেয়ে বেশ এগিয়ে। এয়ারক্র্যাফটের সংখ্যায় চীন ভারতের চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নয়। ভারতের হাতে যে সংখ্যক যুদ্ধবিমান রয়েছে, নিজেদের আকাশসীমার সুরক্ষায় তা যথেষ্ট বলেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন। একসঙ্গে একাধিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি লড়তে না হয়, তা হলে ভারতীয় বিমান বহর চীনের সঙ্গে যুদ্ধ চালাতে সক্ষম। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ভারতের হাতে বেশ কম। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর কর্তাদের দাবি, তাদের বাহিনীর হাতে সুখোই-৩০ এমেকেআই-এর মতো প্রবল শক্তিশালী যুদ্ধবিমান পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকায় অ্যাটাক হেলিকপ্টারের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নেই। ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা চীনের হাতে ভারতের চেয়ে অনেকটাই বেশি। তবে যে পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের হাতে রয়েছে, কোনও একটি যুদ্ধে তত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দরকার পড়ে না বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাতেও চীন অনেকটা এগিয়ে ভারতের চেয়ে। তবে চীন এবং ভারতের মতো দু’টি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না।