অাকাশ নিউজ ডেস্ক:
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সরকার বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখছে ৫৭ ধারা রাখা দরকার আছে, কি নেই। তিনি বলেন, ‘এ আইনটা মানবাধিকার বিরোধী বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে যদি সাংঘর্ষিক হতো এতদিন কেউ উচ্চ আদালতে গেলে এটা বাতিল হয়ে যেত।আজ পর্যন্ত কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে এ আইনকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক প্রমাণ করতে পারেনি। আইনটা সাংবাদিকদের জন্য করা হয়নি। ডিজিটাল এবং নাগরিক নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে।’ বুধবার সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছ থেকে যে অভিযোগ এসেছে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা ঘটনা খতিয়ে দেখেছে। কোন জায়গায় এ আইনের যদি বরখেলাপ হয় বা কোনরকম হয়রানির ব্যাপার হয় সেটা তথ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে। আমরা সাথে সাথেই এটা দেখি এবং বিচারকরাও যদি দেখেন যে কোন মিথ্যাচার হয়েছে, তাহলে জামিন দিয়ে দিচ্ছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই আইনে অনেক সাংবাদিক নিগৃহীত হচ্ছে এ কথাটা সঠিক নয়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ২ হাজার ৮শ’র এর অধিক নিবন্ধিত পত্র-পত্রিকা রয়েছে, ১ হাজার ৮শ’র অধিক অনলাইন পত্রিকা এবং পোর্টাল চলছে। প্রতিটি হাউসে যদি ১০ জন সাংবাদিক হিসাব করা হয় তাহলে দেখা যাবে বহু সাংবাদিক কাজ করছে। সেদিক থেকে যদি দেখা হয় খুবই নগণ্য, ২ থেকে ১ জন এ আইনে গ্রেফতার হয়েছেন এবং আদালতে যাওয়ার পরে ২-১ দিনের মধ্যেই জামিন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, তারপরও সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমগ্র ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য একটি সমন্বিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করার খসড়া চলছে। এ আইনে সবারই অংশগ্রহণ থাকবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৬ এবং ৫৭ ধারা কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে করা হয়নি। এটা সাধারণ দণ্ডবিধি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার যাত্রা শুরু করার আগে থেকে এই আইনটি করা হয়েছিল। এটা কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য করা হয়নি। সেখানে ডিজিটাইজেশনের ফলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে যদি কেউ আইন বিরোধী কর্মকান্ড করে সেটার জন্যই এই আইনটি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ডিজিটাইজেশনের ফলে তথ্য-প্রযুক্তি স্পেসে যদি কেউ অপব্যবহার করে, উস্কানি দেয়, চরিত্র হনন করে, বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে এবং সংবিধানে যেগুলোকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ব্যাপারে ক্ষতি হতে পারে অথবা সাম্প্রদায়িক উস্কানি হতে পারে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে, যেগুলো আইন দ্বারা দণ্ডবিধিতে বিধিবদ্ধ করা আছে। সেখানে যদি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কেউ চরিত্র হনন, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, বিশৃঙ্খলা তৈরি এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ তৈরি করে সেই ক্ষেত্রেই আইনটি প্রয়োগ হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি অনলাইনে বা সামাজিক গণমাধ্যমে এরকম কাজে লিপ্ত হয় তার ক্ষেত্রে এ আইনটি প্রয়োগ হয়। এটা সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োগ হয় এ কথাটা ঠিক নয়। যে কোনো নাগরিক, যিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে, টুইটার এ সব জায়গায় যদি কেউ চরিত্র হনন করে কোন পোস্ট দেয় তাহলে এ আইনের আওতায় আসে। এটা ১৬ কোটি মানুষের জন্য।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, এ আইন করা হয়েছে আমাদের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করার, নারীর সম্মান রক্ষা করার, শিশু নিরাপত্তা বিধান করার, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান করার, রাষ্ট্রের পবিত্রতা রক্ষা, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠান নিরাপত্তা বিধান করার জন্য। এইক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটলেই কেবল আইনটা প্রয়োগ করা হয়।’
এটা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই আইনে যারা গ্রেফতার হয় তারা একটা পর্যায়ে জামিনযোগ্য। যারা এই আইনে গ্রেফতার হয়েছে সবাই জামিন পেয়েছেন।’