ঢাকা ১০:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় গরুতে আশাভঙ্গের শঙ্কায় খামারিরা

অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মসুরাকান্দা গ্রামের কাশফুল অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সাহিদুল ইসলাম। আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য তিনি ৩৩টি গরু বাছাই করে রেখেছেন। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ মাস বয়সী ২১টি বাছুর কিনেছিলেন তিনি। এখন সেগুলো দুই বছরের একটু বেশি বয়সী গরু। প্রতিটি গরুর দাম ৮০ হাজার টাকা করে আশা করছেন এই খামারি।

গরু কেনার জন্য স্থানীয় ক্রেতারা ইতিমধ্যে সাহিদুলের কাছে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। তবে ঈদের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, তত শঙ্কা বাড়ছে সাহিদুলের। গরুর প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন তিনি। তাঁর এই শঙ্কার মূলে আছে ভারতীয় গরু।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু বৈধ ও অবৈধ দুইভাবেই আসা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এই সংখ্যা সামনে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাহিদুলের মতো আরও অনেক খামারি।

সাহিদুল বলেন, ‘শুনছি ভারত থেকে গরু আসতেছে। প্রতি বছর ঠিক কোরবানির সময় এমন অবস্থা হয়। আমরা সারা বছর গরু পালি। কিন্তু কোরবানির ঈদের আগে বর্ডার খুলে দেওয়া হয়। এমন হইলে ব্যবসা করমু ক্যামনে?’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে দেশে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু জবাই হয়। এর প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ করে আসছিলেন দেশের খামারিরা। বাকি গরু ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসত। তবে গত কয়েক বছর ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশে গরুর দাম কিছুটা বাড়লেও তেমন সংকট হয়নি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে খামারের সংখ্যা প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ। এসব খামারসহ সারা দেশে এখন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া রয়েছে পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার কোরবানির উপযোগী। এসব পশুর মধ্যে সাড়ে ৪৪ লাখ গরু ও সামান্য সংখ্যক মহিষ রয়েছে। ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৭১ লাখ। ২০১৬ সালে যা ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার। আগের বছরের চেয়ে কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৮৭ হাজার। এ ছাড়া গত বছর কোরবানির উপযোগী ১ কোটি ১৪ লাখ পশুর মধ্যে কোরবানি করা হয় ১ কোটি ৫ লাখ পশু।

বেশ কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়া, মাংসের মূল্য বৃদ্ধি ও খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কারণে দেশে গরু লালন-পালনে আগ্রহ বেড়েছে। তাই অনেকে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। কোরবানির ঈদে গরুর দাম ভালো পাওয়ার আশায় এই খাতে নিজস্ব অর্থায়নের বিনিয়োগ বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, দেশে সারা বছর গরু-ছাগলের যে পরিমাণ চাহিদা থাকে, তার অর্ধেক ঈদুল আজহায় কোরবানি হয়। কোরবানির জন্য যে পরিমাণ পশু দেশে রয়েছে, তা দিয়ে এবারও চাহিদা পূরণ করা যাবে। কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। চাহিদা অনুযায়ী দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু আছে। তাই গত ২৫ জুলাই সচিব পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ঈদের সময় ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়।

তবে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু আসতে বাধা নেই বলে গত বুধবার জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভারত থেকে গরু আসায় অসুবিধা হবে না।

এ প্রসঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করেছি, স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করেছি, যাঁরা এসব ব্যবসায় সম্পৃক্ত তাঁদেরও সম্পৃক্ত করেছি। রাখালদের রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এনে সম্পৃক্ত করেছি। ওপারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এপারের ব্যবসায়ীরা যেন সম্পৃক্ত থাকে, আমরাই সুবিধাগুলো তাঁদের দিচ্ছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, দেশে কোরবানির ঈদের সময় গরু আসা বন্ধ করে দিলে অসুবিধা হবে। কারণ, এত সংখ্যায় (গরু) উৎপাদন করা যাবে না। বরং সবার অসুবিধা হবে।

বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে সাড়ে ৪ লাখ গরু বাংলাদেশে এসেছে।

কোরবানির ঈদের সময় ভারত থেকে গরু এলে তাতে দেশের খামারিরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ এমরান। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছর গরু পালন করে কোরবানির ঈদের সময় তা বিক্রির প্রস্তুতি নিই। ঠিক তখনই আমাদের সব আশা এলোমেলো হয়ে যায়। এ সময় গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। তার ওপর যদি ভারত থেকে গরু আসে, তাহলে সেটি দেশের খামারিদের জন্য আত্মঘাতী হবে।’

শাহ এমরান বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম না বাড়ালে, খামার থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ বিল আদায় না করলে, গরু লালন-পালনের সরঞ্জাম আমদানিতে ভর্তুকি দিলে কোরবানির জন্য আমরাই তুলনামূলক কম দামে গরু সরবরাহ করতে পারব। কিন্তু ভারতে থেকে গরু এলে আমাদের আশা মাটিতে মিশে যাবে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

ভারতীয় গরুতে আশাভঙ্গের শঙ্কায় খামারিরা

আপডেট সময় ০৩:৩৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০১৭

অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মসুরাকান্দা গ্রামের কাশফুল অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সাহিদুল ইসলাম। আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য তিনি ৩৩টি গরু বাছাই করে রেখেছেন। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ মাস বয়সী ২১টি বাছুর কিনেছিলেন তিনি। এখন সেগুলো দুই বছরের একটু বেশি বয়সী গরু। প্রতিটি গরুর দাম ৮০ হাজার টাকা করে আশা করছেন এই খামারি।

গরু কেনার জন্য স্থানীয় ক্রেতারা ইতিমধ্যে সাহিদুলের কাছে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। তবে ঈদের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, তত শঙ্কা বাড়ছে সাহিদুলের। গরুর প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন তিনি। তাঁর এই শঙ্কার মূলে আছে ভারতীয় গরু।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু বৈধ ও অবৈধ দুইভাবেই আসা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এই সংখ্যা সামনে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাহিদুলের মতো আরও অনেক খামারি।

সাহিদুল বলেন, ‘শুনছি ভারত থেকে গরু আসতেছে। প্রতি বছর ঠিক কোরবানির সময় এমন অবস্থা হয়। আমরা সারা বছর গরু পালি। কিন্তু কোরবানির ঈদের আগে বর্ডার খুলে দেওয়া হয়। এমন হইলে ব্যবসা করমু ক্যামনে?’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে দেশে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু জবাই হয়। এর প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ করে আসছিলেন দেশের খামারিরা। বাকি গরু ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসত। তবে গত কয়েক বছর ভারত থেকে গরু আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশে গরুর দাম কিছুটা বাড়লেও তেমন সংকট হয়নি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে খামারের সংখ্যা প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ। এসব খামারসহ সারা দেশে এখন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া রয়েছে পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার কোরবানির উপযোগী। এসব পশুর মধ্যে সাড়ে ৪৪ লাখ গরু ও সামান্য সংখ্যক মহিষ রয়েছে। ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৭১ লাখ। ২০১৬ সালে যা ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার। আগের বছরের চেয়ে কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৮৭ হাজার। এ ছাড়া গত বছর কোরবানির উপযোগী ১ কোটি ১৪ লাখ পশুর মধ্যে কোরবানি করা হয় ১ কোটি ৫ লাখ পশু।

বেশ কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়া, মাংসের মূল্য বৃদ্ধি ও খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার কারণে দেশে গরু লালন-পালনে আগ্রহ বেড়েছে। তাই অনেকে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। কোরবানির ঈদে গরুর দাম ভালো পাওয়ার আশায় এই খাতে নিজস্ব অর্থায়নের বিনিয়োগ বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, দেশে সারা বছর গরু-ছাগলের যে পরিমাণ চাহিদা থাকে, তার অর্ধেক ঈদুল আজহায় কোরবানি হয়। কোরবানির জন্য যে পরিমাণ পশু দেশে রয়েছে, তা দিয়ে এবারও চাহিদা পূরণ করা যাবে। কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। চাহিদা অনুযায়ী দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু আছে। তাই গত ২৫ জুলাই সচিব পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ঈদের সময় ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়।

তবে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু আসতে বাধা নেই বলে গত বুধবার জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভারত থেকে গরু আসায় অসুবিধা হবে না।

এ প্রসঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করেছি, স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করেছি, যাঁরা এসব ব্যবসায় সম্পৃক্ত তাঁদেরও সম্পৃক্ত করেছি। রাখালদের রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এনে সম্পৃক্ত করেছি। ওপারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এপারের ব্যবসায়ীরা যেন সম্পৃক্ত থাকে, আমরাই সুবিধাগুলো তাঁদের দিচ্ছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, দেশে কোরবানির ঈদের সময় গরু আসা বন্ধ করে দিলে অসুবিধা হবে। কারণ, এত সংখ্যায় (গরু) উৎপাদন করা যাবে না। বরং সবার অসুবিধা হবে।

বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে সাড়ে ৪ লাখ গরু বাংলাদেশে এসেছে।

কোরবানির ঈদের সময় ভারত থেকে গরু এলে তাতে দেশের খামারিরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ এমরান। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছর গরু পালন করে কোরবানির ঈদের সময় তা বিক্রির প্রস্তুতি নিই। ঠিক তখনই আমাদের সব আশা এলোমেলো হয়ে যায়। এ সময় গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যায়। তার ওপর যদি ভারত থেকে গরু আসে, তাহলে সেটি দেশের খামারিদের জন্য আত্মঘাতী হবে।’

শাহ এমরান বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম না বাড়ালে, খামার থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ বিল আদায় না করলে, গরু লালন-পালনের সরঞ্জাম আমদানিতে ভর্তুকি দিলে কোরবানির জন্য আমরাই তুলনামূলক কম দামে গরু সরবরাহ করতে পারব। কিন্তু ভারতে থেকে গরু এলে আমাদের আশা মাটিতে মিশে যাবে।’