অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:
সৌদি নারী ইয়াসমিন। সৌদিতেই সংসার পেতেছেন বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে। তাদের ঔরসে জন্ম নেয় ফুটফুটে ৫ সন্তান। স্বামী সিদ্ধান্ত নেন, তারা বাংলাদেশে ফিরে যাবেন এবং বাংলাদেশেই স্থায়ী হবেন। স্বামীর পরামর্শে বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্ত্রীও। সেই মতে, বসবাস উপযোগী বাড়ি তৈরি করার কথা বলে দেশে চলে আসেন স্বামী। স্ত্রীও তার জমানো সব অর্থকড়ি স্বামীর হাতে তুলে দেন। আর স্বামী বাংলাদেশে এসেই আরেক নারীর ফাঁদে পড়েন। বিয়েও করেন তাকে। এ খবর শুনে সৌদিতে থাকতে পারেননি স্ত্রী ইয়াসমিন আরা। ৫ সন্তান নিয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে।
তবে, যে স্বামীর আশা ভরসায় এসেছেন, সে স্বামীই দ্বিতীয় স্ত্রীর ভয়ে পালিয়ে থাকছেন স্ত্রী সন্তানদের কাছ থেকে! স্বামীর শ্যাম রাখি না কুল রাখি ভূমিকায় অচেনা মানুষের দেশে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন ইয়াসমিন। যে যেদিকে পথ দেখাচ্ছেন, সেদিকেই দৌড়াচ্ছেন। চোখের পানিকে সাথী করে অবুঝ ৫ সন্তান নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তিনি। গতকাল কক্সবাজার আদালত এলাকায় পরিপাটি স্কুল ড্রেসপরা ১০ থেকে ২ বছর বয়সী ৫ ছেলেমেয়ে নিয়ে অসহায় এক ভদ্র মহিলাকে উৎসুক লোকজন দেখছিলেন। আর সবার দিকে ফেল ফেল করে থাকাচ্ছিলেন তারা। ছেলেমেয়েদের চোখে পানি ছল ছল করছে। ছোট ৩ ছেলেমেয়ে আব্বু, আব্বু করে কান্না করছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল এক হৃদয়বিদারক কাহিনী।
৫ সন্তানের জননী ইয়াসমিন আরা জানান, সৌদি আরবে পারিবারিক শানশওকত ব্যবসা ছেড়ে ৫ সন্তান নিয়ে স্বামীর কাছে এসেছেন। তিনি জানান, পবিত্র মক্কা নগরীতে স্বামী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে ২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়। তাদের সুখের সংসারে জন্ম নেয় ৫ সন্তান। এক সময় এসে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার প্রস্তাব দেয় স্বামী। স্বামীর প্রস্তাবে রাজি হন স্ত্রী।
বাংলাদেশে বসবাস উপযোগী বাড়ি তৈরি করার কথা বলে সচ্ছল স্ত্রী থেকে বিপুল অর্থকড়ি নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন স্বামী। দেশে এসে নিয়মিত যোগাযোগও রাখেন প্রবাসী স্ত্রীর সঙ্গে। বাড়ি নির্মাণকাজের কথা বলে সরলমনা স্ত্রীর কাছ থেকে কয়েক দফায় হাতিয়ে নেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এদিকে স্বামীর আচরণগত পরিবর্তন, স্ত্রী ছেলেমেয়েদের দিকে অমনোযোগী ও প্রায়শ টাকা চেয়ে বসায় সন্দেহ হয় স্ত্রীর। তিনি স্বামীর খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ইয়াসমিন নিশ্চিত হন, তসলিমা নামের আরেকজনকে বিয়ে করেছেন তার স্বামী। এ খবর শুনে তিনি নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। অবুঝ ৫ সন্তান নিয়ে গত বছরের ৮ই এপ্রিল বাংলাদেশে চলে আসেন।
বাংলাদেশে আপনজন বলতে স্বামী ছাড়া কেউই ছিল না তাদের। নতুন পরিবেশে নানান সমস্যা পাড়ি দিয়ে অবশেষে কক্সবাজার পৌঁছান ইয়াসমিন। উঠেন কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী আবাসিক হোটেল প্যানোয়ায়। সেখানে এসে স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে দেখা করেন স্বামী। স্বামীর পরামর্শে শহরের সিনেমা রোডে বাসা ভাড়া নেন। সে বাসাতেও যাতায়াত ছিল স্বামী মোহাম্মদ আলীর। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ছন্দপতন ঘটে স্বামীর এ আসা যাওয়ায়।
দ্বিতীয় স্ত্রী তসলিমা প্রবাসী স্ত্রীর দেশে ফেরা ও গোপনে ওই স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ঘটনা জানতে পারেন। তিনিও বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি আত্মীয়স্বজন ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে ইয়াসমিনের ভাড়া বাসায় হানা দেন। প্রথম স্ত্রীকে দুশ্চরিত্রা বলে স্বামীর সামনেই মারধর করেন। শুধু তাই নয়, স্বামীকে টেনেহেঁচড়ে তার দখলে নিয়ে যান। তখন থেকে আর স্বামীর দেখা মিলছে না।
এদিকে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে ১লা নভেম্বর ’১৬ তারিখ আদালতে মামলা করেন ইয়াসমিন। এ মামলা দায়েরের পর অব্যাহত হুমকির মুখে গত ৬ই জুলাই কক্সবাজার থানায় একটি সাধারণ ডাইরিও করেছেন তিনি। একদিকে স্বামীর পালিয়ে থাকা, অন্যদিকে দ্বিতীয় স্ত্রীর নির্যাতন, হুমকি, থানা কোর্টে মামলা নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাছেন ইয়াসমিন। তার কথা একটিই সন্তানরা বাবা ফিরে পেলে আর কিছু চান না তিনি।