অাকাশ স্পোর্টস ডেস্ক:
নিজের হার না মানা মানসিকতাই ইতিহাসের পাতায় স্থান দিল ওপার বাংলার হুগলির শ্রীরামপুর কলেজে ইতিহাসের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সায়নী দাসকে। ছোট থেকেই হার মানতে শিখেনি মেয়েটা। বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক রাধেশ্যাম দাস মেয়েকে এভাবেই গড়ে তুলেছেন। ভয়ঙ্কর ইংলিশ চ্যানেলে পানির সঙ্গে লড়াইটা সহজ ছিল না। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই ইতিহাস গড়েন তিনি।
সায়নী বলেন, `ঠান্ডায়, যন্ত্রণায় পৌঁছনোর পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। পাইলট টানা ম্যাসাজ করে জ্ঞান ফেরান। জয়ের আনন্দের কাছে তখন অবশ্য সব কষ্টই ফিকে হয়ে গিয়েছিল। সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাসই ছোট থেকে মেয়েকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেন। মেয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময় পাশে পাইলট বোটে ছিলেন তিনি। তিনি জানান, `তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসছিল। তার ওপর বড় বড় ঢেউ, ভাসমান শ্যাওলা, জলজ উদ্ভিদের কাঁটা বারবার গায়ে জড়িয়ে যাওয়ায় খুবই মুশকিলে পড়ছিল সায়নী।
সায়নীও বলেন, `জেলিফিসের রোঁয়া গায়ে লাগতেই শরীরের জ্বালা অনুভব হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল একসঙ্গে অনেক কাঠপিঁপড়ে কামড়াচ্ছে। রাধেশ্যাম দাস আরও বলেন, `ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রায় কিছুই খেতে পারছিল না সায়নী। ফ্রান্সে ঢোকার আগে ঢেউ আরও বেড়ে যায়। সঙ্গে ৯ ডিগ্রিরও কম তাপমাত্রা। বারবার ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে যাওয়ায় ১৪ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়েছে।
ইংলিশ চ্যানেল জয়ের আগে ভারতের জাতীয় ও রাজ্য পর্যায়ে একাধিক সোনা, রূপা জিতেছেন সায়নী। তবে ইংলিশ চ্যানেল জয়ের ঝোঁক জন্মায় বছরখানেক আগে। শরীরচর্চার পাশাপাশি দিঘার সমুদ্রে অনুশীলন চলে। মেয়ের জেদ পূরণে নিজের সঞ্চয় তো বটেই, নানা জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করেন সায়নীর বাবা। ৮ জুলাই ইংল্যান্ড রওনা দেন তারা। ৯ জুলাই ইংল্যান্ডের হেট্রো পৌঁছন। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অনুশীলন শুরু হয় ডোভারে।
সায়নী জানান, ১৫ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেল জয়ের মিশনে নামার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় নামার অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমনকী ফেরার দিন এগিয়ে আসায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণী। তখনই পাশে দাঁড়ায় চ্যানেল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন। আবহওয়ার সামান্য উন্নতি হওয়ায় মাত্র ৪ জনকে আলাদা আলাদা সময়ে নামার অনুমতি দেওয়া হয় মঙ্গলবার।
স্থানীয় সময় দুপুর ১টার (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা) দিকে ইংলিশ চ্যানেল অভিযান শুরু হয় সায়নীর। মা রুপা দাস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, `মেয়ে জলে নেমেছে জানার পরে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। সকাল ১১টার দিকে ওর বাবা ফোনে জানান ১৪ ঘণ্টা লড়াই করে মেয়ে সফল হয়েছে।