ঢাকা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমি নাকি ভুয়া লোক: শিক্ষামন্ত্রী

অাকাশ নিউজ ডেস্ক:

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে থেকেও নেই। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে নিজেই জানালেন সে কথা।মন্ত্রী জানান, তার ছোট মেয়ে তার (মন্ত্রীর) নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিছুদিন চলার পর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই সেই অ্যাকাউন্টকে মন্ত্রীর ভুয়া অ্যাকাউন্ট মনে করে একের পর এক ব্লক করতে থাকেন। ফলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও অ্যাকাউন্টটি ব্লক করে দেয়। যদিও এতে অখুশি নন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ফেসবুক নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলেন নাহিদ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মোটামুটি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার আছে। ৪০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম রয়েছে। এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের ছেলে-মেয়েরা এসব শিখছে। এ সময় নিজের প্রযুক্তিজ্ঞান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এসব তো কিছু বুঝি না! মোবাইলে কল করা, রিসিভ করা, এসএমএস দেওয়া ও এমএমএস পাওয়া— এটুকু বুঝি। এখন ফেসবুক বের হয়েছে। তাও সেখানে ঢুকতে পারি না। আমার একটা ফেইসবুক আইডি বানিয়ে দিয়েছিল আমার মেয়ে, সেটা আবার কে একজন ব্লকড করিয়ে দিয়েছে। … আমি নাকি ভুয়া লোক। চিন্তা করে দেখেন! আমাকে ভুয়া বলে ব্লকড করে দিয়েছে। এমন দুই নম্বরী ও জালিয়াতি কি হতে পারে?’ বিষয়টি আগে কখনও প্রকাশ করেননি জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘তবে বন্ধ হয়েছে, ভালো হয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল ও মৌলিক পরিবর্তনে সরকারের প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চাই বিশ্বমানের শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি। শিক্ষার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ভালো মানুষ করে গড়ে তোলা আমাদের কাজ। জ্ঞান ও শিক্ষার মান উন্নত করতে আসল ও নিয়ামক শক্তি হিসেবে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করবেন আশা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো একজন কর্মী। শিক্ষকরা চিরকাল ধরে আছেন, তারা গুরু, আগে গুরুর কথায় জীবন দিয়ে দিত। শিক্ষকদের কাছে আমরা সেটাই প্রত্যাশা করব। আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং শিক্ষকরা তা করছেনও।

তবে বেতন বাড়ার কারণে এমন কিছু লোক শিক্ষকতায় পেশায় ঢুকেছেন যারা ক্লাসে পড়ান না— এমন অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ক্লাসে পড়ালেই তো শেষ হয়ে যায়, তা না করে সেই শিক্ষক নামধারী লোক বাইরে পড়ায়। ওই শিক্ষকই শিক্ষার্থীর বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উত্তর বলে দিচ্ছে। কিছু শিক্ষক কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগে আগে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ছবি তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কালো গ্লাসের গাড়ি নিয়ে প্রশ্ন আনতে যেত, যেন সেখানেই কাজটা সেরে ফেলতে পারে। আমরা এসব ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন নিয়ে কেন্দ্রে না যেতে ও কালো গ্লাসের গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। ‘

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত অনেককে গ্রেফতারের কথাও বলেন নাহিদ। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে প্রিন্সিপাল, হেড মাস্টার ও অন্যান্য শিক্ষক রয়েছেন। তারা আমাদের শিক্ষকদের কলঙ্ক, ওই ধরনের লোক শিক্ষক থাকতে পারবে না। সেটা আমাদের সবাইকে চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রকৃত শিক্ষকদের সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ প্রমুখ।

মো. নুরুল আমিন জানান, এ বছর প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমানের পর্যায়ে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৫৩৩ শিক্ষার্থীকে ১৩৮ কোটি ৩৫ হাজার ৮৬০ টাকা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক লাখ ৯২ হাজার ৪৫ জন ছাত্রী ও ৬২ হাজার ৪৮৮ জন ছাত্র।

অনুষ্ঠানে সুইচ টিপে ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ‘রকেটে’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

আমি নাকি ভুয়া লোক: শিক্ষামন্ত্রী

আপডেট সময় ০৩:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০১৭

অাকাশ নিউজ ডেস্ক:

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে থেকেও নেই। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে নিজেই জানালেন সে কথা।মন্ত্রী জানান, তার ছোট মেয়ে তার (মন্ত্রীর) নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিছুদিন চলার পর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই সেই অ্যাকাউন্টকে মন্ত্রীর ভুয়া অ্যাকাউন্ট মনে করে একের পর এক ব্লক করতে থাকেন। ফলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও অ্যাকাউন্টটি ব্লক করে দেয়। যদিও এতে অখুশি নন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ফেসবুক নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা বলেন নাহিদ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মোটামুটি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার আছে। ৪০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম রয়েছে। এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের ছেলে-মেয়েরা এসব শিখছে। এ সময় নিজের প্রযুক্তিজ্ঞান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এসব তো কিছু বুঝি না! মোবাইলে কল করা, রিসিভ করা, এসএমএস দেওয়া ও এমএমএস পাওয়া— এটুকু বুঝি। এখন ফেসবুক বের হয়েছে। তাও সেখানে ঢুকতে পারি না। আমার একটা ফেইসবুক আইডি বানিয়ে দিয়েছিল আমার মেয়ে, সেটা আবার কে একজন ব্লকড করিয়ে দিয়েছে। … আমি নাকি ভুয়া লোক। চিন্তা করে দেখেন! আমাকে ভুয়া বলে ব্লকড করে দিয়েছে। এমন দুই নম্বরী ও জালিয়াতি কি হতে পারে?’ বিষয়টি আগে কখনও প্রকাশ করেননি জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘তবে বন্ধ হয়েছে, ভালো হয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল ও মৌলিক পরিবর্তনে সরকারের প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চাই বিশ্বমানের শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি। শিক্ষার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ভালো মানুষ করে গড়ে তোলা আমাদের কাজ। জ্ঞান ও শিক্ষার মান উন্নত করতে আসল ও নিয়ামক শক্তি হিসেবে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করবেন আশা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো একজন কর্মী। শিক্ষকরা চিরকাল ধরে আছেন, তারা গুরু, আগে গুরুর কথায় জীবন দিয়ে দিত। শিক্ষকদের কাছে আমরা সেটাই প্রত্যাশা করব। আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং শিক্ষকরা তা করছেনও।

তবে বেতন বাড়ার কারণে এমন কিছু লোক শিক্ষকতায় পেশায় ঢুকেছেন যারা ক্লাসে পড়ান না— এমন অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ক্লাসে পড়ালেই তো শেষ হয়ে যায়, তা না করে সেই শিক্ষক নামধারী লোক বাইরে পড়ায়। ওই শিক্ষকই শিক্ষার্থীর বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উত্তর বলে দিচ্ছে। কিছু শিক্ষক কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর আগে আগে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ছবি তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কালো গ্লাসের গাড়ি নিয়ে প্রশ্ন আনতে যেত, যেন সেখানেই কাজটা সেরে ফেলতে পারে। আমরা এসব ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন নিয়ে কেন্দ্রে না যেতে ও কালো গ্লাসের গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। ‘

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত অনেককে গ্রেফতারের কথাও বলেন নাহিদ। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে প্রিন্সিপাল, হেড মাস্টার ও অন্যান্য শিক্ষক রয়েছেন। তারা আমাদের শিক্ষকদের কলঙ্ক, ওই ধরনের লোক শিক্ষক থাকতে পারবে না। সেটা আমাদের সবাইকে চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রকৃত শিক্ষকদের সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ প্রমুখ।

মো. নুরুল আমিন জানান, এ বছর প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমানের পর্যায়ে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৫৩৩ শিক্ষার্থীকে ১৩৮ কোটি ৩৫ হাজার ৮৬০ টাকা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক লাখ ৯২ হাজার ৪৫ জন ছাত্রী ও ৬২ হাজার ৪৮৮ জন ছাত্র।

অনুষ্ঠানে সুইচ টিপে ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং ‘রকেটে’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী।