ঢাকা ১০:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদুরিকে নির্যাতনের শাস্তি জানা যাবে ১৮ জুলাই

অাকাশ নিউজ ডেস্ক:

প্রায় চার বছর আগে মিরপুরের পল্লবীতে ময়লার স্তূপ থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার শিশু গৃহকর্মী আদুরির উপর নির্যাতনের মামলার রায় ঘোষণা হবে ১৮ জুলাই। ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার মামলায় যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রোববার রায় ঘোষণার এই দিন রাখেন। আলোচিত এ মামলার আসামি আদুরির গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী ও তার মা ইশরাত জাহান।

২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে আদুরিকে (১১) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন তার গৃহকর্ত্রী পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১, সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা নওরীন জাহান নদী ধারালো চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে, ইস্ত্রি দিয়ে সেঁক দিয়ে মারাত্মক জখম করে মেয়েটিকে সেখানে ফেলে রাখে।এ ঘটনার তিন দিন পর আদুরির মামা একটি বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কর্মরত মো. নজরুল চৌধুরী বাদী হয়ে পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

মামলায় নদী (২৫) ও তার মা ছাড়াও নদীর স্বামী মো. সাইফুল ইসলাম মাসুদ (৩৪), তাদের আত্মীয় সৈয়দ চুন্নু মীর ও মো. রনিকে আসামি করা হয়।

মামলায় বলা হয়, স্বামী মারা যাওয়ায় তার বোন আদুরির মা সাফিয়া বেগম (৪৫) নয় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েন। অনাহারে অর্ধাহারে তাদের জীবন কাটতে থাকে।চুন্নু মীর তার শ্যালক সাইফুল ইসলাম মাসুদের বাসায় মাসিক পাঁচশ টাকা বেতনে আদুরিকে গৃহকর্মে দেওয়ার প্রস্তাব করলে সাফিয়া রাজি হয়।

আদুরি সেখানে ভালো আছে বলে চুন্নু জানালেও মেয়েটির সঙ্গে তাদের দেখা করাতে রাজি হয়নি চুন্নু। পরে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে পত্রিকায় আদুরির ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা জানতে পারেন তারা।

“আদুরিকে অনাহারে অর্ধাহারে রেখে চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করা হয়েছে, গরম ইস্ত্রি দিয়ে সেঁক দিয়ে ক্ষত করে ডাস্টবিনে ফেলে রাখা হয়েছে।”

হাকিমের কাছে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ২২ ধারার জবানবন্দিতে আদুরি বলে, গৃহকর্ত্রী নদী তাকে দিনে একবেলা, শুধু রাতের বেলা মুড়ি খেতে দিত। বাসার ব্যালকনিতে থাকতে দিত।মাঝে মধ্যে লবণ দিয়ে ভাত খেতে দিত। প্রায়ই গরম ইস্ত্রি দিয়ে সেঁক দিত শরীরের বিভিন্ন স্থানে।

“ব্লেড দিয়ে কেটে এক সময় মুখে সে আগুন ধরিয়ে দেয়। নদীর মা তাকে লাঠি দিয়ে মারত। ভয়ে এ নির্যাতনের কথা কাউকে বলেতে পারিনি।”

মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই বছর ১ অক্টোবর নদীও দোষ স্বীকার করে মহানগর হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন।

নদী বলেন, সংসারে টাকা পায়সার টানাটানিতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি। আদুরি কোনো কাজে ভুল করলে তার খুব রাগ হত। খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতেন আদুরিকে।
“বেল্ড দিয়ে পোচও দিয়েছি, গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকাও দিয়েছি।এ কারণে তার শরীরে অনেক ক্ষত হয়।”

তদন্তের পর ওই বছরের ১০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের এসআই কুইন আক্তার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে নওরীন জাহান নদী ও ইশরাত জাহানকে অভিযুক্ত করা হয়। অন্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

পরের বছর ১৬ জুন এ ট্রাইব্যুনালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে ১৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বেশ কয়েকবার জামিন নাকচ হওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ইশরাতকে জামিন দেন বিচারক।আর নদী এখনও কারাগারে আছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার পানি কমার সাথে সাথে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে

আদুরিকে নির্যাতনের শাস্তি জানা যাবে ১৮ জুলাই

আপডেট সময় ১১:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০১৭

অাকাশ নিউজ ডেস্ক:

প্রায় চার বছর আগে মিরপুরের পল্লবীতে ময়লার স্তূপ থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার শিশু গৃহকর্মী আদুরির উপর নির্যাতনের মামলার রায় ঘোষণা হবে ১৮ জুলাই। ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার মামলায় যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রোববার রায় ঘোষণার এই দিন রাখেন। আলোচিত এ মামলার আসামি আদুরির গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী ও তার মা ইশরাত জাহান।

২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে আদুরিকে (১১) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন তার গৃহকর্ত্রী পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১, সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা নওরীন জাহান নদী ধারালো চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে, ইস্ত্রি দিয়ে সেঁক দিয়ে মারাত্মক জখম করে মেয়েটিকে সেখানে ফেলে রাখে।এ ঘটনার তিন দিন পর আদুরির মামা একটি বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কর্মরত মো. নজরুল চৌধুরী বাদী হয়ে পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

মামলায় নদী (২৫) ও তার মা ছাড়াও নদীর স্বামী মো. সাইফুল ইসলাম মাসুদ (৩৪), তাদের আত্মীয় সৈয়দ চুন্নু মীর ও মো. রনিকে আসামি করা হয়।

মামলায় বলা হয়, স্বামী মারা যাওয়ায় তার বোন আদুরির মা সাফিয়া বেগম (৪৫) নয় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েন। অনাহারে অর্ধাহারে তাদের জীবন কাটতে থাকে।চুন্নু মীর তার শ্যালক সাইফুল ইসলাম মাসুদের বাসায় মাসিক পাঁচশ টাকা বেতনে আদুরিকে গৃহকর্মে দেওয়ার প্রস্তাব করলে সাফিয়া রাজি হয়।

আদুরি সেখানে ভালো আছে বলে চুন্নু জানালেও মেয়েটির সঙ্গে তাদের দেখা করাতে রাজি হয়নি চুন্নু। পরে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে পত্রিকায় আদুরির ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা জানতে পারেন তারা।

“আদুরিকে অনাহারে অর্ধাহারে রেখে চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করা হয়েছে, গরম ইস্ত্রি দিয়ে সেঁক দিয়ে ক্ষত করে ডাস্টবিনে ফেলে রাখা হয়েছে।”

হাকিমের কাছে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ২২ ধারার জবানবন্দিতে আদুরি বলে, গৃহকর্ত্রী নদী তাকে দিনে একবেলা, শুধু রাতের বেলা মুড়ি খেতে দিত। বাসার ব্যালকনিতে থাকতে দিত।মাঝে মধ্যে লবণ দিয়ে ভাত খেতে দিত। প্রায়ই গরম ইস্ত্রি দিয়ে সেঁক দিত শরীরের বিভিন্ন স্থানে।

“ব্লেড দিয়ে কেটে এক সময় মুখে সে আগুন ধরিয়ে দেয়। নদীর মা তাকে লাঠি দিয়ে মারত। ভয়ে এ নির্যাতনের কথা কাউকে বলেতে পারিনি।”

মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই বছর ১ অক্টোবর নদীও দোষ স্বীকার করে মহানগর হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন।

নদী বলেন, সংসারে টাকা পায়সার টানাটানিতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি। আদুরি কোনো কাজে ভুল করলে তার খুব রাগ হত। খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতেন আদুরিকে।
“বেল্ড দিয়ে পোচও দিয়েছি, গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকাও দিয়েছি।এ কারণে তার শরীরে অনেক ক্ষত হয়।”

তদন্তের পর ওই বছরের ১০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের এসআই কুইন আক্তার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে নওরীন জাহান নদী ও ইশরাত জাহানকে অভিযুক্ত করা হয়। অন্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

পরের বছর ১৬ জুন এ ট্রাইব্যুনালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে ১৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বেশ কয়েকবার জামিন নাকচ হওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ইশরাতকে জামিন দেন বিচারক।আর নদী এখনও কারাগারে আছেন।